সময় এখন অর্গানিক কৃষির


সময় এখন অর্গানিক কৃষির ১৯৮০ সালের দিকে শুরু হয় এন্টিবায়োটিক তথা গ্রোথ-প্রমোটারের ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায় প্রাণীজ উৎপাদন তথা মাংস, ডিম দুধের প্রায় এক দশক পরে শুরু হয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ে গবেষণা ১৯৯৪ সালের দিকে এন্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিক গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশ্যে চলে আসে নিয়ে লিখেছেন কৃষিবিদি মো. শাহীন আলম


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় প্রকাশ পায় এন্টিবায়োটিকের চরম ক্ষতির দিক হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, অটিজমসহ বিভিন্ন মরণঘাতী রোগের কারণ এন্টিবায়োটিক একই বছরে সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গ্রোথ প্রমোটারের ব্যবহার বন্ধ করে দেয় এতে করে প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা শুরু হয় কৃষি বিষয়ক বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা দেশের বিকল্প নিয়ে গবেষণা শুরু করে কিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে অধিক প্রাণিজ আমিষ তথা মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদন করা যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিকল্প হিসেবে অর্গানিক পদ্ধতিতে গুল্ম জাতীয় ওষুধি গুণসম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ (হার্ব জাতীয়) দিয়ে অধিক উৎপাদন নিয়ে গবেষণা শুরু করে 

অর্গানিক কৃষির এমন শুভযাত্রায় বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীরাও জায়গা করে নেয় এর মধ্যে অন্যতম হলেন . আল মামুন তিনি ২০০৩-০৪ সালের দিকে এশিয়ান ইয়ুথ ফেলোশিপে জাপানের মনোবুকাগাকুসো মন্ত্রণালয়ের আওতায় অর্গানিক সিস্টেমে প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন ধরে রাখা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা শুরু করেন জাপানের ইউয়াতে ইউনিভার্সিটির প্র. . হিরোআকি সানোর শুরু করা অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন . মামুন 

অর্গানিক কৃষিতে লাগসই কার্যকরী কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ২০০৮ সালে জাপানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট এবং ২০০৯ সালে জাপানিজ সোসাইটি অব অ্যানিম্যাল সায়েন্স কর্তৃক আউটস্টেন্ডিং ইয়াং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন . মামুন কিন্তু জাপানে সাড়া জাগানো গবেষণা বাংলাদেশে কি ভূমিকা রাখবে বলে জানতে চাইলে . মামুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়ে বলেন, বিশ্ব এখন অর্গানিক খাদ্যে বিশ্বাসী খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন হলেই নিরাপদ খাদ্যই এখন উন্নত দেশগুলোর সস্নোগানে পরিণত হয়েছে 

বাংলাদেশও এখন খাদ্য নিরাপত্তার দ্বারপ্রান্তে কিন্তু নিরাপদ খাদ্য তথা অর্গানিক খাদ্য উৎপাদনে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেই অর্গানিক কৃষির একজন গবেষক হিসেবে আমি বলতে চাই, স্বাস্থ্যসম্মত মেধাবী জাতি গঠনে অর্গানিক কৃষিকে এগিয়ে নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময় এজন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা, গবেষণা, সহযোগিতা দক্ষ জনবল 

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স নামক জার্নালে পাওয়া যায়, অর্গানিক ফুড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষ ধ্বংস কমিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহযোগিতা, সুস্থ-সবল শিশু জন্মগ্রহণ, কাজের ক্ষমতা দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রাণিজ আমিষের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি, খাদ্যের রং, গন্ধ স্বাদ বৃদ্ধি, স্ট্রোক, হার্ট ডিজিজ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন উপকারী কাজ করে অর্গানিক খাদ্য উৎপাদনে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে . মামুন প্রতিবেদককে বলেন, সুষ্ঠু গবেষণার পরিকল্পনাই প্রথম কাজ গবেষণার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রয়োজন কিভাবে এগিয়ে যাবে অর্গানিক কৃষি তথা প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন এজন্য গবাদিপশু মাছের খাদ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে সঙ্গে নিতে হবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সমপ্রসারণ কর্মকা- জোরদার করতে হবে শিক্ষার মান উন্নয়ন শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের মতো কার্যকরী প্রকল্প সরকারকে হাতে নিতে হবে এবং উৎপাদিত প্রযুক্তি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে 

অর্গানিক কৃষির গবেষণায় এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে কি ব্যবহার করতে হবে জানতে চাইলে . মামুন বলেন, আমাদের দেশেই বিভিন্ন হার্ব জাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে যা প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায় এসবই হলো এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হাতিয়ার যেমন, সজিনা, নিম, পেঁয়াজ, গার্লিক, প্লান্টেইন, অর্জুন, বাসক, কালমেঘ, তুলসি, পাথরকুটি, হোয়াইট ক্লোভার, রেড ক্লোভারসহ বিভিন্ন হার্ব জাতীয় উদ্ভিদ প্রত্যেকটি গাছই ওষুধি গুণসম্পন্ন কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রাণিজ আমিষ উৎপাদনে কি পরিমাণ কিভাবে ব্যবহার করতে হবে এমন লাগসই অর্গানিক কৃষি প্রযুক্তি এখনো উদ্ভাবন হয়নি ওইসব উদ্ভাবনে দরকার আধুনিক ল্যাবরেটরি, সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ বিশেষজ্ঞ জনবল আশার কথা হচ্ছে, রাজধানীর বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টাল সপে অর্গানিক ফুডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় যা খুবই নগন্য 

অর্গানিক কৃষির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী . আল মামুন বর্তমানে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের পশুপুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন বাকৃবির একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১১ সালের জুলাই থেকে 'ওষুধি গুণসম্পন্ন হার্ব দিয়ে ভেড়ার ওপর অর্গানিক পদ্ধতিতে গবেষণা শুরু করেন তিনি যা আগামী ২০১৩ সালের জুনে শেষ হবে কিন্তু এত অল্প সময়ে গবেষণা শেষ হবে না বলে তিনি জানান এজন্য তিনি পরবর্তী গবেষণার জন্য সহযোগিতা কামনা করেন . মামুন ২০০৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মালয়েশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পিএইচডি পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন মানিকগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণকারী তরুণ গবেষক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বহির্বিশ্ব থেকে অর্জিত অর্গানিক কৃষির জ্ঞানকে দেশের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাই আর সুস্থ মেধাবী জাতি বিনির্মাণে অর্গানিক কৃষিকে গুরুত্ব দিতেই হবে লেখক : সাংবাদিক শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ