ছাদেই যখন অর্গানিক খামার

একসময় কীটনাশক আর সার ছাড়াই প্রচুর সবজি ফলত আর তা খেয়ে মানুষ বেঁচে থাকত কথায় কথায় যেতে হতো না কোনো ডাক্তারের কাছে উন্নত বিশ্ব চিন্তা করল এই সুখের ভাণ্ডার নষ্ট করে দিতে হবে বাঙালিকে লোভ দেখিয়ে গছিয়ে দিল হাইব্রিড শস্য ফলন ভালো হলো, কৃষক খুশি কিন্তু কৃষক জানল না, কী বিষ ঠুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তার পদ্ধতিতে এখন আবার চিৎকার করছে ফিরিয়ে আন সনাতন বীজ কিন্তু সেই সুযোগ কি আছে? তারা যা চেয়েছিল তা হয়েছে আমাদের নিজস্ব বীজভাণ্ডার ধ্বংস হয়ে গেছে সবজি আর সব খাদ্যের শরীরে হাইব্রিড তকমা আর কীটনাশকের বাসা নিশ্চিত হয়েছে

ইদানীং যুক্ত হয়েছে ফরমালিন বা ধরনের কিছু পদার্থ, যা দিয়ে পচনশীল সবকিছুকে তাজা রাখা যায় বহুদিন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এতসব ব্যাপার সবাইকে কিছুটা ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে ইদানীং এতসব ধাঁধা এড়িয়ে অর্গানিক স্বাস্থ্যসম্মত সবজি আপনি নিজেই ফলাতে পারেন যেমন গুলশান--এর ১১৬ নম্বর রোডে কামরুজ্জামান কাঠা জমির ওপর নির্মিত বাড়ির ছাদে চাষ করেছেন নানা জাতের সবজি লিফটে উঠে বললাম_ ছাদে যাব সবজি ক্ষেতে? লিফটম্যান এমন কথা শুনে কিছুটা থমকে গেলেন এই ভেবে যে, সাত তলায় সবজি ক্ষেত নেমে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়াতে হলো কোন দিকে যাব ভেবে পাচ্ছি না পরক্ষণেই বয়স্কমতো একজন এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, কেমন আছেন? আমি কামরুজ্জামান, চলেন ছাদে যাওয়া যাক সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই চোখ কপালে উঠে গেল সারি সারি টবে টমেটো, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি ফলে আছে আর স্ট্রবেরি, কমলা, লেবু, আমড়া, নানা জাতের ফলের গাছ এক নজর দেখে নিয়েছি কেবল


আমার সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট সাধারণ সম্পাদক গোলাম হায়দার ভাই হাঁক দিলেন, আরে ওপরে চলেন, আসল জিনিস দেখবেন চিলেকোঠার ঘরের ছাদে লোহার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গেলাম উপরে উঠে তো ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা যেন একটা সবজির ক্ষেত উঠিয়ে এনে এখানে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে কী নেই এখানে? বাঁশের চালি দিয়ে বানানো চারকোনা বাক্সের মধ্যে মাটি দিয়ে তার ওপর চাষ করা হয়েছে শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ধনেপাতা, লালশাক, পালংশাক, বরবটি, বেগুন, মরিচ, করলাসহ যতসব সবজি কামরুজ্জামান সাহেব এবং গোলাম হায়দার জানালেন, দুই পদ্ধতিতে ছাদে বাগান করা যায় প্রথমত, বাঁশ দিয়ে চারকোনা বাক্স বানিয়ে তলায় কাঠের তলানি দিয়ে বাক্স বানিয়ে তার মধ্যে পলিথিন দিয়ে, তার মধ্যে মাটি দিয়ে সবজি চাষ করা যায় দ্বিতীয়ত, তেলের বড় ড্রাম লম্বালম্বি কেটে দুই ভাগ করে দুটি বক্স করে তার মধ্যে মাটি দিয়ে চাষ করা যায় বাঁশ-কাঠের বাক্স অথবা ড্রাম কাটা বাক্সে প্রথমে পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভরাট করে তার ওপর গাছের চারা অথবা বীজ সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে পদ্ধতিতে গাছ রোপণে খুব তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া সম্ভব বাগানে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, ডাটা, মুলা, ধনিয়া, শালগম, ব্রকলি, কেপসিকাম, আলু ইত্যাদি চাষ করা যায় শৌখিন চাষি হলে যা খুশি চাষ করতে পারেন তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চাইলে অবশ্যই পুরো ছাদে একটি অথবা দুটি জিনিসের চাষ করতে পারেন মনে রাখতে হবে টবে বা বাক্সে কখনোই লতানো গাছ লাগানো ঠিক হবে না হাজার বর্গফুটের একটা ছাদে বাগান করতে চাইলে ফুট বাই ফুটের ২৫টি বাক্স রাখা যাবে বাঁশের বাক্স বানালে এক একটার খরচ পড়বে ১৫০০ টাকার মতো আর কাঠের হলে খরচ পড়বে ২৫০০ টাকার মতো লোহার ড্রাম কিনে মাঝখানে কেটে নিলে সব মিলিয়ে এক একটা বাক্সের খরচ পড়বে ৭০০ টাকা ২৫টি বাক্সের জন্য সার মিশ্রিত মাটি লাগবে ১৪ কিউবিক ফিট এই ১৪ কিউবিক সার মিশ্রিত মাটির দাম পড়বে হাজার টাকা এমন একটা বাগান থেকে জনের পরিবারের সবজি পেয়েও উপরি থেকে যাবে বাগান করার চেয়ে পরের দায়িত্ব আরও বেশি


প্রতিদিন সকাল-বিকেল দেখাশোনা করা একবেলা পানি দেওয়া দুই মাসে একবার গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দেওয়া পোকা-মাকড় আক্রমণ করল কি-না তা নিয়মিত খেয়াল রাখা সর্বোপরি সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে বাগান ছাদের বাগানে সবজি চাষের পাশাপাশি ফুল, ফলের চাষ বাড়তি পাওনা পরিচর্যা বলতে পানি দিতে হবে আর আপনি তো সবজি গাছে পানি দিচ্ছেনই ছাদ বাগানে সবজি বলতে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, শসা, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স, বরবটি, শিম, ক্যাপসিকাম, লেটুসপাতা, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা, করলাসহ প্রায় সব ধরনের সবজি ফলানো সম্ভব ফুলের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, দোলনচাঁপা, ডালিয়া, চন্দ্রমলি্লকা ইত্যাদি ফলানো সম্ভব ছাদে ফলের গাছ রাখার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন গাছটি বড় আকারের না হয় অর্থাৎ ছোট আকারের গাছ লাগাতে হবে এবং ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য কলম করা ফলদ গাছ লাগানো যেতে পারে ইউফোরবিয়াসহ মৌসুমি সব ফুলেরই চাষ করা সম্ভব ফলের মধ্যে আম, জাম, লিচু, শরিফা, সফেদা, কামরাঙ্গা, বাতাবিলেবু, জলপাই, কদবেল, ডালিম, পেয়ারা, কমলা, মালটা, কুল চাষ করা যায় ছোট একটি টবে ফল ধরলে যেমন দেখতে সুন্দর লাগে, তেমনি ছাদে প্রচুর পরিমাণ রোদ লাগে বলে ফলও ভালো হয় তাই কিছু ফলের গাছ রাখলে লাভই, বরং ক্ষতি নেই আম্রপালি মলি্লকা জাতের আম, পেয়ারা, আপেল কুল, জলপাই, করমচা, শরিফা, আতা, আমড়া, লেবু, ডালিম, পেঁপে, এমনকি কলা গাছও লাগানো যাবে

সৌজন্যে: সমকাল।