বাড়ির ছাদে অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এক সময় প্রচুর কাজ ব্যস্ততার মধ্যে সময় কেটেছে তার তিনি এখন বিশ্রামে, হাতে প্রচুর সময় রফিকুল ইসলাম যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি তিনি অর্গানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করছেন বাগানটি করেছেন নিজ বাড়ির ছাদে শুধু রফিকুলই নন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অনেকেই এখন বাসার ছাদে শাকসবজির চাষ করছেন

তবে অনেকেই গতানুগতিকভাবে টবের মধ্যে সবজি, লেবু, মরিচ ইত্যাদির চাষ করছেন বাসার ছাদে ফুলের টবের পাশাপাশি এসব লাগাচ্ছেন নিতান্তই শখের বশে কেউ কেউ অবশ্য বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাদের পরিবেশকেই মিনি সবজির বাগানে পরিণত করেছেন কিন্তু এমন উদ্যোগে খরচ এবং পরিশ্রম দুটোই বেশি হয়

তবে একটু উদ্যোগ নিলেই ঢাকাসহ অন্য শহরের মানুষও রাসায়নিক সার রাসায়নিক বিষের কালো ছোবল থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদ হাসি রানী বিশ্বাস তিনি জানান, অর্গানিক ফসল উৎপাদন করলে বিষমুক্ত খাবার খাওয়া সম্ভব আর বাড়ির ছাদেও তা উৎপাদন করা যায় এতে পরিশ্রম বা খরচও খুব বেশি হয় না প্রশিকার সহযোগী সমন্বয়কারী (অর্গানিক কৃষি) হাসি রানী বিশ্বাস আরও জানান, প্রশিকা গত তিন বছর ধরে বাড়ির ছাদে অর্গানিক পদ্ধতিতে ফসল ফলাতে প্যাকেজ সার্ভিস চালু করেছে সার্ভিসের আওতায় প্রতি মৌসুমে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বেড, মাটি, জৈব সার এবং প্রতি মৌসুমে বীজ বা চারা সরবরাহ করা হয়ে থাকে

প্রশিকার পরিচালক (ফিল্ড অপারেশন, অর্গানিক কৃষি, স্কিল ট্রেনিং) দীপক কুমার ঘোষ জানান, প্রশিকার প্যাকেজ সার্ভিসের মাধ্যমে ছাদে অর্গানিক পদ্ধতিতে যেভাবে শাকসবজি উৎপাদন করা হচ্ছে, তাতে বিষমুক্ত খাবার খাওয়া যায় আর এর মাধ্যমে একটি পরিবারের সারা বছরের প্রয়োজনীয় শাকসবজি উৎপাদন সম্ভব

প্রশিকার দুই কর্মকর্তা কৃষিবিদ তাদের কর্মসূচির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন এর মাধ্যমে রাজধানীবাসী শহরাঞ্চলের মানুষ রাসায়নিক সার রাসায়নিক বিষের কবল থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন বলেও তারা মনে করেন

তারা জানান, ৩০০ বর্গফুট আয়তনের বাড়ির ছাদে ৮দ্ধ২ ফুট আকারের ১২টি বেডে থেকে জন বিশিষ্ট পরিবারের ৩টি ফসল মৌসুমে সারা বছরের বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব বেডগুলো ছাদ থেকে দুই ইঞ্চি উঁচুতে থাকে, যাতে বেডের নিচ দিয়ে সহজে পানি চলাচল করতে পারে যার ফলে ছাদের কোনো ক্ষতি হয় না অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বেডের ভেতরের পানি নিষ্কাশনের জন্য কিছু পাইপ দেয়া হয়, যাকে লেভেল পাইপ বলা হয় পাইপের মাধ্যমে বেডের পানি বের হয়ে যায়

তারা জানান, ৮দ্ধ২ ফুট আকারের বাঁশের ফ্রেম পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় পরে তাতে ইঞ্চি পরিমাণ জৈব মাটি দেয়া হয় (আবর্জনা পচা মাটি) জৈব মাটির সঙ্গে জৈব সার মিশ্রিত করে তাতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চারা বা বীজ বপন করা হয়

পরিচর্যার ব্যাপারে তারা জানান, শীত গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি না হলে চারা বা বীজে একদিন পর পর বিকালে পানি দিতে হয় ১৫ দিন পর পর গাছের চারদিকে নিড়ানি দিয়ে হালকাভাবে খুঁচিয়ে মাটি আলগা করে ঝুরঝুরে করতে হয় আর আগাছাগুলো গাছের গোড়ায় বিছিয়ে দিতে হয় এছাড়া মাস পর জৈব সার ছাই প্রয়োগ করতে হয় তারা জানান, এমন সামান্য পরিশ্রমে ১২টি বেড থেকে বছরে ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব জানা গেছে, প্রশিকার প্যাকেজ সার্ভিসে প্রতি বেডের তিন বছরের জন্য খরচ হাজার ৪০০ টাকা এবং প্রতি মৌসুমে জৈব সার বীজ/চারা বাবদ ১৩০ টাকা পরিশোধ করতে হয় প্রতি বেডের হাজার ৪০০ টাকার ৫০ শতাংশ ছাদের মালিক প্রশিকা পক্ষের চুক্তির সময় পরিশোধ করতে হয় বাকি ৫০ শতাংশ টাকা সবজি উৎপাদনকালীন পরিশোধ করার নিয়ম

কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা জানান, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন শহরে বাসার ছাদে অর্গানিক পদ্ধতিতে শাকসবজি উৎপাদন করে অনেকেই বেশ সফল হয়েছেন তাদের মধ্যে এমনই একজন আবদুল হক তালুকদার তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরিশাল শহরে নিজ বাড়ির ছাদে তিনি সবজির বাগান করেছেন আবদুল হক তালুকদার জানান, প্রশিকার সহায়তায় তিনি বাগানটি করেছেন বাগানটির দেখাশোনা পরিচর্যায় তার সময়টা কাটছে ভালো আর পরিবারের জন্য বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পেরে খুব খুশি বলেও জানান তিনি
 সৌজন্য: আলোকিত বাংলাদেশ।