গরুর চেয়ে কবুতর পালন লাভজনক

গরু পালনের চেয়ে কবুতর পালন অধিক লাভজনক।’ কথাগুলো বলেন চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার কবুতরের খামারি ডা. মাহবুব। তিনি উপজেলার অনেক শখের কবুতর পালনকারীর মতো এখন পুরোদস্তুর কবুতর ব্যবসায়ী। তাদের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে এলাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ছোট-বড় খামার। স্বল্প পুঁজিতে প্রায় অর্ধশত যুবক কবুতর পালন থেকে মাসে আয় করছে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

এ সব খামারে দেশি-বিদেশি দুই শতাধিক প্রজাতির কবুতর রয়েছে। জাতভেদে প্রতি জোড়া কবুতরের মূল্য ৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেমন- রূপালী, লাল, কালো, হলুদ, চকলেট রঙের লাহর সিরাজী কবুতর ৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, বিভিন্ন রঙের মৌক্ষি ৮ থেকে ৮০ হাজার টাকা, বিভিন্ন রঙের আফ্রিকান কৌটারবল ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা, নান ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা, কিং মার্কিন ৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা, হাউস প্রিজন ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা, রেন্ট ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা, স্ট্রেচার ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, ভুটান ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা, হুমার ৩ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া দেশি প্রজাতির গিরিবাজ, গিয়াচুল্লী, ছিলা জিরা গলা, সবুজ গলা ও লাল কবুতর ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে আসছে।


খামারিরা জানান, তারা সাধারণত কবুতরকে ভুট্টা ভাঙা, খেসারি, গম, ছোলা ও সরিষা মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৩ বার খেতে দেন। খামার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজীগঞ্জ বাজারে চালু হয়েছে কবুতর পালনের আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম নিয়ে তিনটি দোকান। খামারি রোগ-বালাইয়ের জন্য অধিকতর সরকারি পরামর্শ ও সাহায্য দরকার।

এ সব খামারিদের অগ্রগণ্য হলেন- হাজী মো. হারুনুর রশিদ, ডা. মাহবুব, ডা. ওয়াসিক ফয়সাল, এমরান হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান সুজন, হেদায়েত উল্লাহ, পৌর এলাকার খোকন, শাহআলম মাস্টার, মাহবুবুর রহমান মিলন প্রমুখ।

খামারি হাজী মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রথমে শখের বশে কবুতর পালন করেছি। এখন ব্যবসায়িকভাবে মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছি। সমস্যা হল রোগ-বালাইয়ে সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় না।’

খামারি মোস্তাফিজুর রহমান সুজন জানান, কবুতরের সবচেয়ে বড় রোগ রাণীক্ষেত। ২ মাস পরপর ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন। হোমিও পদ্ধতিতেও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।

খামারের সরঞ্জাম সরবারহকারী এনিমেল এগ্রোর মালিক একে আজাদ বলেন, ‘কবুতরের খাঁচা, খাবার ও ভ্যাকসিনসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে দোকান দিয়েছি। কবুতর পালনে দিন দিন খামারি বাড়ায় আমরাও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দিয়ে লাভবান হচ্ছি।’

কবুতরের মাংস শরীরের উপকারিতা প্রসঙ্গে শাহ মিরান হসপাতালের ডা. সুমন বলেন, ‘অন্যান্য মাংসের মতোই কবুতরের মাংস শরীরের প্রোটিন জোগায়।’



উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুকবুল আহম্মদ বলেন, ‘কবুতর খামরিরা পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তবে সরকারিভাবে বিশেষ কোনো চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থায় নেই। সরকারের এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপও নেই।’ রাণীক্ষেত রোগের ভ্যাকসিন সংকট প্রসঙ্গে জানান, হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিনটাই কবুতরের জন্য দিয়ে থাকি। ভ্যাকসিনের সংকট নেই বলেও জানান তিনি।