কম খরচে মাছের সম্পূরক খাবার তৈরিতে রেইনট্রি গাছের ফল

মাছ চাষ একটি লাভজনক পেশা। সারাদেশব্যাপী মাছ চাষের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৯.৩০ লাখ জনগোষ্ঠী জড়িত আছে। কিন্তু দিন দিন এই পেশা থেকে মাছ চাষীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে নিম্নমানের অপ্রতুল মাছের খাবার অধিকদামে বিক্রয় করা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহের একদল গবেষককের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাছের খাবারের বিকল্প উৎস নিয়ে গবেষণা করে প্রথম সফলতা অর্জন করেছেন। মাছ চাষের জন্য প্রচলিত মাছের খাবার ফিশমিল, বোন মিল, হুইটব্রাই, রাইস ব্রান, ইত্যাদির বেশ কিছু দেশের বাহির থেকে আমদানি করা হয়। ফলে খাদ্যের দাম স্বভাবতই বেড়ে যায়। অথচ গবেষণা করে এসব খাদ্যের পরিবর্তে রেইনট্রি গাছের ফল থেকে প্রস্তুতকৃত খাবার ব্যবহার করে বেশ লাভজনক ফলাফল পাওয়া গেছে।


রেইনট্রি গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Albizia saman; যা বাংলাদেশে কড়ই/চড়ই নামে অধিক পরিচিত। এটি Leguninasae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, একটি মাঝারি আকারের রেইনট্রি গাছ বছরে আনুমানিক ১০০-২০০ কেজি ফল উৎপন্ন করতে পারে। অথচ এই ফলের কোনই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেইনট্রি ফলে প্রোটিন ২০%, ফ্যাটি ৩.৩৩%, কার্বহাইড্রেট ৪৭%, অ্যাশ ৮% এবং স্টার্চ ১৯% আছে যা মাছের খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম। প্রকল্পের একটি অংশে ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এমএস এর ছাত্র মি. মোঃ মাহমুদ হাসান তার থিসিসের কাজ করেছেন। এই থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ডা. মোঃ ইদ্রিস মিয়া এবং কো-সুপারভাইজার ছিলেন প্রাণ রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-অর-রশিদ।


প্রাণ রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ডা.ঃ মোঃ হারুন-অর-রশিদের মতে রেইনট্রি ফল দিয়ে অল্প খরচে আমরা যদি মাছের খাবার তৈরি করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন রেইনট্রি গাছের ফলের সঠিক ব্যবহার করা সম্ভব হবে তেমনি অন্যদিকে মাছের উৎপাদনও বাড়বে। রেইনট্রি গাছের ফল থেকে মাছের খাবার তৈরি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন পদক্ষেপ। এটি সফলভাবে ব্যবহার করতে পারলে মৎস্য চাষে ব্যয় কমে আসবে এবং প্রান্তিক মৎস্যচাষীগণ লাভবান হবে এবং মৎস্যচাষে আরো উৎসাহিত হবে। সর্বোপরি মাছের উৎপাদনও বাড়বে। 


গবেষণা পদ্ধতি: প্রথমে রেইনট্রি গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করা হয়। ফলগুলোকে সূর্যের আলোতে শুকিয়ে গুঁড়া করা হয়। এই রেইনট্রি ফলের গুঁড়া দিয়ে চারটি ডোজের মাছের খাবার তৈরি করা যায়। যাতে রেইনট্রি ফলের গুঁড়া প্রথমটিতে ৬০%, দ্বিতীয়টিতে ৫০%, তৃতীয়টিতে ৪০% দেয়া হয় এবং চতুর্থটিতে রেইনট্রি ফলের গুঁড়া দেয়া হয় না (Control)। এই চারটি খাবারের প্রত্যেকটিতে সমান পরিমাণ প্রোটিন (Iso-nitrogenous) রাখা হয়। তারপর চারটি ডোজের খাবার একুরিয়ামে মনোসেক্স তেলাপিয়া পোনা মাছকে ৪৯ দিন খাওয়ানো হয়। দৈনিক মাছের দেহের ৫% হারে দুইবার খাবার দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পর মাছের দেহের ওজন, দৈর্ঘ্য, বেঁচে থাকার হার এবং খাদ্য গ্রহণের অনুপাত পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, চারটি ডোজের খাবারের মধ্যে যে, খাবারটিতে ৫০% রেইনট্রি ফলের গুঁড়া ছিল সেটিতে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের বৃদ্ধি আশানুরূপ হয়েছিল।

প্রতিকেজি রেইনট্রি ফলের মাছের খাবার তৈরিতে ২০-২৪ টাকা খরচ হয়। এটি বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে খাবার তৈরি করতে পারলে খাবারের দাম আরো কমে যাবে। আমরা যদি রেইনট্রি গাছের ফল দিয়ে মাছের খাবার তৈরি করতে পারি, তাহলে প্রচলিত মাছের খাবারের উপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমে যাবে, সেই সাথে প্রান্তিক মাছ চাষীদের খরচ কমে যাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং কর্মসংস্থান ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অর্থের সংস্থান হলে এ ব্যাপারে আরো উচ্চতর গবেষণা করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

1 comments:

Unknown said... Udyokta

এই পদ্ধতির বিস্তারিত কিভাবে জানা যাবে?