পুকুরে মাগুর মাছ চাষের একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপত্র

মাগুর মাছ চাষে সুবিধা


ছোট বড় সব ধরনের জলাশয়ে শিং ও মাগুর মাছ চাষ করা যায়। এ সব মাছ বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন নেয় বলে চাষে ঝুঁকি কম। অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়। তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা বেশি। বাজারমূল্য ভাল। সুষ্ঠু খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাগুর মাছ ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনে উন্নীত করা যায়।

পুকুরের আয়তন 

  • ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য পুকুর আয়তকার হতে হবে
  • পুকুরের আয়তন ২০-৫০ শতাংশের মধ্যে হলে ব্যবস্থাপনা করতে সুবিধা হয়
  • তবে পুকুরের আয়তন ১০০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না
  • পুকুরের গড় গভীরতা ৪.৫-৫.৫ ফুট হলে ভাল হয়
নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী: পুকুর প্রস্তুতির গুরত্বিপূর্ণ কাজ হলো নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করা বা ঘের দেয়া। পুকুরের চার পাড়ে বর্ষাকালের পানির লেভেলের অন্তত ২ফুট উপরে শক্ত করে অবশ্যই ঘের দিতে হবে। ঘের না দিলে বৃষ্টির সময় কানকো দিয়ে পরিভ্রমন করে কৈ মাছ পাড় বেয়ে পুকুরের বাইরে চলে যেতে পারে। সাধারণত কৈ মাছ পানিতে ১.৫ ফুট পর্যন্ত লাফ দিতে পারে। কিন্তু শুকনো স্থানে লাফ দিতে পারে না। তাই ১ ফুট থেকে ১.৫ ফুট উচু পর্যন্ত ঘের দিলেও চলে। তবে সাপ ব্যাঙ প্রভৃতি শত্র“র হাত থেকে রক্ষার জন্য ঘের কমপক্ষে ২.৫ উচু দেয়া বাঞ্চনীয় এখানে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, কি দিয়ে ঘের তৈরী করতে হবে। টিন, ঘন ফ্যাসের নাইলন জাল বা বাশের বানা দিয়ে ঘের তৈরী করা যায়। কেস ক্যালচারের প−াস্টিক নেট এর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। স্থায়ী ভাবে করতে চাইলে ইটের ঘাখুনি দিয়েও ঘের দেয়া যায়। ঘের দেয়ার সময় সর্তকতার সাথে লক্ষ্য রাথতে হবে যেন নীচের অংশে কোন ফাকা না থাকে এবং ঘের যেন মজবতু ও টেকসই হয়। ঘের দেয়ার ব্যাপারে কোন গাফিলতি করলে পরবতী পর্যার্  য়ে চাষি চরম ভাবে আথির্ক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। 

ঘের তৈরীর সামগ্রী: নাইলনের জাল, বাঁশের খুটি/গাছের ডালের খুটি, সুতলি, কোদাল ইত্যাদি।

বেষ্টনী তৈরী : পুকুর পাড়ের উপর চর্তুদিকে ৬ ইঞ্চি গভীর করে পরিখা খনন করতে হবে। পরে এই গর্তের মধ্যে ৮-১০ ফুট পর পর বাঁশের খুটি/গাছের ডাল শক্ত করে পুঁতে দিতে হবে। এরপর নাইলনের নেট দ্ধারা পুকুর পাড়ের চর্তুদিকে ঘিরে ফেলতে হবে। পরিখার ভিতর নেট ডুকিয়ে পরিখা খনের মাটি দিয়ে নেটকে শক্ত করে মাটির সংঙ্গে আটকে দিতে হবে। কিছুুকছু খামাওে কম দামের টিন দিয়েও বেষ্টনী তৈরী করতে দেখা গেছে। নিম্নমানের টিন ৩ থেকে ৪ বৎসর ব্যবহার করা যায়। 

বেষ্টনী তৈরীর সময়: এখন প্রশ্ন করা যেতে পাওে কখন বেষ্টনী তৈরী করতে হবে। সাধারণত পুকুর শুকানোর পর বেষ্টনী তৈরী করতে হবে। পুকুরে পানি না থাকলে ব্যাঙ, সাপ ইত্যাদি ক্ষতিকর প্রাণী পুকুরে থাকে না। পানি ভর্তি করার পর পরই পানিতে বসবাসকারী অন্যান্য প্রাণী পুকুরে প্রবেশ করে। তাই পুকুর সেচ দেয়ার পর পরই বেষ্টনী তৈরী করে পরে পুকুর প্রস্তুতির অন্যান্য কাজ করতে হবে।

বেষ্টনী পর্যবেক্ষণ: বেষ্টনী পর্যবেক্ষণ প্রতিদিনের রুটিন কাজ হতে হবে। কারণ বাতাস, বন্য প্রাণি ইত্যাদি বেষ্টনী উঠিয়ে ফেলতে পারে। বাণিজ্যিক খামারে বেশী ঘনত্বে মাছ চাষ করা হয় বিধায় কুকুর ও শিয়ালকে বড় বড় মাছ ধরে খেতে দেখা গেছে। তাই এ সকল প্রাণী বেষ্টনীর ক্ষতি করতে পারে।
স্বচ্ছতা ও ঘোলাত্ব : পুকুরের পানি ঘোলা হলে কার্যকর সূর্যালোক পানির নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে না। ফলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য অর্থাৎ উদ্ভিদ-প−্যাঙ্কটনের উৎপাদন কমে যায়। আবার পানির উপরের স্তরে অতিরিক্ত উদ্ভিদ-প−্যাঙ্কটন উৎপাদনের ফলেও পানির স্বচ্ছতা কমে যেতে পারে। এতে অক্সিজেনের অভাবে মাছের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। পানির স্বচ্ছতা ২৫ সেন্টিমিটার হলে পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হয়। ঘোলা পানি মাছের খাদ্য চাহিদাকে প্রভাবিত করে। ঘোলা পানিতে দ্রবীভূত বিভিন্ন ধরনের কণা মাছের ফুলকায় আটকে থেকে ফুলকা বন্ধ করে দেয়। এতে মাছের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ফলে মাছের খাদ্য চাহিদা হ্রাস পায়।
  • প্রতি শতকে ১.০-১.৫ কেজি হারে জিপসাম প্রয়োগ করে পানির ঘোলাত্ব দূর করা যায়।
  • পুকুরের কোণায় খড়ের ছোট ছোট আটি রেখে দিলেও এক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া য়ায়।
পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে করণীয়:
  • পানির উপরিভাগে ঢেউ সৃষ্টি করে বা পানি আন্দোলিত করে 
  • সাঁতার কেটে বা বাঁশ পিটিয়ে বা হাত দিয়ে পানি ছিটিয়ে 
  • পাম্প দিয়ে নতুন পানি সরবরাহ করে। 
পুকুর প্রস্তুতি: পুকুর পোনা মাছ মজুদ করার পূর্বে একজন মৎস্য চাষির নিকট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পুকুরটি মাছ চাষ উপযোগী করে প্রস্তুত করে নেয়া। প্রথমে পুকুরকে সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা প্রয়োজন। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম রোটেনন পাউডার পানিতে গুলিয়ে সমভাবে পুকুরে ছিটিয়ে দিয়ে সব ধরনের মাছ অপসারণ করা যায়। এরপর পুকুরের তলায় শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন ছিটিয়ে দিয়ে ৪-৫ দিন রোদে শুকানোর পর ২/৩ ফুট পানি ভর্তি করা উচিত। তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে ১-২ কেজি) পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি তথা প্রাকৃতিক খাদ্যের সংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতির শেষ ধাপে সার প্রয়োগ করা হয়। চুন প্রয়োগের ৩-৪ দিন (হক, ২০০৬) বা ৭-১০ দিন (মৎস্য অধিদপ্তর, ২০০২) পর নিম্নোক্ত মাত্রায় সার প্রয়োগ করা হয়।


 সার শতাংশ প্রতি সারের মাত্রা
 গোবর অথবা ৫-৭ কেজি
 কমপোস্ট অথবা৮-১০ কেজি 
 হাঁসমুরগির বিষ্ঠ৩-৫ কেজি 
 ইউরিয়া১০০-১৫০ গ্রাম 
 টিএসপি৫০-৭৫ গ্রাম 
 এমপি সার ২০ গ্রাম 
নোট :
  • মেঘলা অথবা বৃষ্টির দিনে সার প্রয়োগ করা ঠিক নয়
  •  অতিরিক্ত সার কখনই ব্যবহার করা ঠিক নয়

    প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ  
    • পুকুরে মাছের পোনা মজুদের আগে প্রাকৃতিক খাদ্য সঠিক পরিমাণে তৈরি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হবে
    • পুকুরে পানির রং দেখে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়
    • সবুজাভ, লালচে বা বাদামী সবুজ রংয়ের পানি মাছ চাষের জন্য ভাল
    • তবে হালকা সবুজ, ঘন সবুজ বা তামাটে লাল বা পরিষ্কার রং এর পানি মাছ চাষের জন্য ভাল নয়
    • তাই সূর্য উঠার পর (সকাল ১১-১২ টার দিকে) নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো ক  
    • সেকিডিস্ক দিয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা  
    • সেকিডিস্ক, লোহা বা টিন দ্বারা তৈরি একটি থালা৷ এর উপরিভাগে সাদা কালো রংয়ের ডোরা কাটা দাগ থাকে
    • এর গোড়া থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লাল নাইলনের সুতা, এরপর ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত সবুজ নাইলনের সুতা এবং তারপর থেকে হাতে ধরা পর্যন্ত ৩.৫ থেকে ৪ ফুট সাদা নাইলনের সুতা দিয়ে বাঁধা থাকে
    • পানিতে লাল সুতা পর্যন্ত ডুবানোর পর থালার সাদা অংশ দেখা না গেলে বুঝতে হবে পুকুরে অতিরিক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য আছে৷ এ অবস্থায় পোনা ছাড়া, সার ও খাদ্য প্রয়োগ কোনোটাই করা যাবে না
    • পানিতে সবুজ সুতা পর্যন্ত ডুবানোর পর থালার সাদা অংশ দেখা না গেলে বুঝতে হবে পুকুরে পরিমিত প্রাকৃতিক খাদ্য আছে৷ এ অবস্থায় পোনা ছাড়া যাবে তবে নিয়ম ও পরিমাণমত সার ও খাদ্য প্রয়োগ করে যেতে হবে
    • পানিতে সবুজ সুতা পর্যন্ত ডুবানোর পরও থালার সাদা অংশ দেখা গেলে বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য কম আছে৷ এ অবস্থায় আরো সার প্রয়োগ করতে হবে 
    • হাতের মাধ্যমে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা  
    • নিজের হাত কুনুই পর্যন্ত পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে হাতের তালু পরীক্ষা করতে হবে
    • পানির রং বাদামী সবুজ কিংবা লালচে সবুজ কিংবা হালকা সবুজ থাকলে এবং একই সাথে হাতের তালু দেখা না গেলে বুঝতে হবে যে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ ঠিক আছে 
    • গ্লাস দিয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা





    • পুকুর প্রস্তুতের সময় পানিতে সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসে পানি তুলতে হবে
    • গ্লাস প্রতি পানিতে যদি ৫-১০টি পরিমাণ ক্ষুদ্র প্রাণীকণা দেখা যায় তবে বুঝতে হবে যে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ ঠিক আছে



        পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা 
        • পুকুরে পোনা ছাড়ার ১-২ দিন পূর্বে অবশ্যই পানির বিষক্রিয়া পরীক্ষা করতে হবে
        • বিষাক্ততা পরীক্ষার জন্য পুকুরে একটি হাপা টাঙ্গিয়ে তার মধ্যে ১০-১৫টি পোনা ছেড়ে ১ দিন পর্যন্ত দেখতে হবে
        • যদি পোনা মারা না যায় তবে বুঝতে হবে যে পানির বিষক্রিয়া কেটে গেছে, এ অবস্থায় পোনা ছাড়া যাবে
        • যদি পোনা মারা যায় তাহলে বুঝতে হবে যে পানিতে এখনও বিষক্রিয়া আছে অতএব পুকুরের পানি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে

          চুন প্রয়োগ 
          • চুন প্রয়োগের ফলে মাটি ও পানির অম্লতা দূর হয়, সারের কার্যকারিতা বাড়ে এবং পানির ঘোলাত্ব দূর হয়
          • পুকুর শুকানোর ২-৩ দিন পর বা বিষ প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর নিম্নলিখিত হারে চুন ব্যবহার করতে হবে

              মাটির পিএইচ
              পাথুরে চুন (কেজি/শতাংশ)
              কলি চুন (কেজি/শতাংশ)
              পোড়া চুন (কেজি/শতাংশ)
              ৩-৫
              ৬
              ঌ
              ১২
              ৫-৬
              ৪
              ৬
              ৮
              ৬-৭
              ২
              ৩
              ৪
            • পি এইচ মাপা সম্ভব না হলে গড়ে প্রতি শতাংশে ১-২ কেজি হারে চুন ব্যবহার করতে পারেন
            • পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে ড্রাম বা বড় চাড়ির মধ্যে পানিতে প্রয়োগের আগের রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে
            • এরপর চুন গুলিয়ে তা পাড়সহ সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে
            • পুকুর শুকানো সম্ভব হলে চুন গুঁড়া করে সরাসরি পুকুরের তলদেশে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে

              চুন প্রয়োগের সময় অবশ্যই নিম্নলিখিত সতর্কতা মেনে চলতে হবে- 
              • চুন ব্যবহারের সময় নাক মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে নেয়া উচিত
              • পুকুরে চুন প্রয়োগের পদ্ধতি
                চুন
                 বাতাসের অনুকূলে ছিটানো উচিত
              • কড়া রোদে চুন বেশি কার্যকর তাই এরকম সময়ে চুন প্রয়োগ করা উচিত
              • পুকুরে মাছ থাকা অবস্থায় চুন দিলে তা অবশ্যই পানিতে গুলে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে
              • প্লাস্টিকের বালতিতে চুন গুলানো যাবে নামাটির চাড়ি বা ড্রামে চুন গুলাতে হবে
              • চুন অবশ্যই শিশুদের নাগালের বাইরে থাকতে হবে

                  পুকুরের পানি ভরাট করা  
                  • পুকুর শুকানো হলে চুন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর পুকুরে পানি সরবরাহ করতে হবে
                  • পানি সরবরাহ কালে যেন কোন রাক্ষুসে মাছ এবং অবাঞ্চিত মাছ ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে  
                  • পুকুর প্রস্তুতির সময়ে সার প্রয়োগ  
                  • পুকুরে পানি ভরাটের ৩-৪ দিনের মধ্যে সার প্রয়োগ করতে হবে
                  • পুকুরে পানির পুষ্টি যেমন - প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করতে হয়
                  • জৈবসার হিসেবে গোবর, হাঁসমুরগির বিষ্ঠা ও কম্পোষ্ট এবং অজৈব সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়  
                    সার প্রয়োগ পদ্ধতি ও মাত্রা
                    সার প্রয়োগ
                    • পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উত্পাদন এবং মাছের ভাল বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করা হয়
                    • পুকুর যদি শুকনো হয় তাহলে প্রয়োজনীয় মাত্রায় জৈব সার সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে
                    • পানি ভরাটের পর অজৈব সার পানিতে গুলে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে
                    • পুকুর যদি আগেই পানি ভর্তি থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় মাত্রায় জৈব ও অজৈব সার একত্রে পাত্রের মধ্যে তিন গুন পানিতে গুলিয়ে ১২-২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে
                    • এরপর গুলানো মিশ্র সার সমানভাবে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে  
                        ------------------------------------------------
                        সার দেয়ার - দিন পর যখন পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হবে তখন পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের নিরাপদ মাত্রা রক্ষা করতে নিয়মিত জিওলাইট এবং গ্যাসের উপস্থিতিতে 'গ্যাসোনেক্স প্লাস' ব্যবহার করলে চাষি উপকৃত হবেন। প্রতি মাসে একবার 'গ্যাসোনেক্স প্লাস' ব্যবহারে মৎস্য চাষি নিরাপদে থাকতে পারেন 

                        মাগুর মাছের দেহ স্বাভাবিক না থাকলে বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যায় না। এ কারণে পুকুরে 'প্রোবায়োটিক্স' (অ্যাকোয়া ম্যাজিক) ব্যবহারে পুকুরের তলদেশের পরিবেশ এবং মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

                        -------------------------------------------------
                          রাক্ষুসে মাছ ও আগাছা দূর করতে বিষ প্রয়োগ পদ্ধতি:
                          অনেক সময়ে অনেক এলাকায় পুকুর পুরোপুরি শুকানো সম্ভব হয় না তখন যেকোনো এক ধরনের বিষ প্রয়োগ করে রাক্ষুষে ও আমাছা দূর করা যেতে পারে
                         ঔষধের নাম শতাংশ প্রতি ঔষধ প্রয়োগ মাত্রাপানির গভীরতাঔষধ প্রয়োগ পদ্ধতি  বিষাক্ততার মেয়াদকাল
                        রোটেনন
                        ঌ.১% শক্তি সম্পন্ন রোটেনন
                        ৭% শক্তি সম্পন্ন রোটেনন

                        ১৬-১৮ গ্রাম অথবা ৩-৪ ম্যাচ বাক্স পরিমাণ

                        ১৮-২৫ গ্রাম অথবা ৪-৫ ম্যাচ বাক্স পরিম
                          ১ ফুট এর বেশি না ১ ফুট এর বেশি প্রয়োজনীয় পরিমাণ পাউডার বালতি কিংবা পাত্রে নিয়ে আস্তে আস্তে পানি মিশিয়ে প্রথমে কাই তৈরি করতে হবে এরপর প্রস্তুতকৃত কাইগুলো তিন ভাগে ভাগ করতে হবে এর এক ভাগ দিয়ে ছোট ছোট বল বানাতে হবে এবং বাকি দুইভাগ অতিরিক্ত পানিতে মিশিয়ে তরল করতে হবে ছোট ছোট বলগুলো পুকুরের পানিতে বিভিন্ন স্থানে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে একই সাথে তরল রোটেননও সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে জাল টেনে পুকুরের পানি ওলট পালট করে দিতে হবে ২০-২৫ মিনিট পর অনাকাঙ্ক্ষিত মাছ ভাসতে শুরু করলে জাল টেনে তুলে ফেলতে  বিষ ছিটানোর পর ৭ দিন পর্যন্ত পুকুরের পানি বিষাক্ত থাকে
                          তামাকের গুঁড়া  ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ৬০০ গ্রাম  ১ ফুট এর বেশি ন তামাকের গুঁড়া এক রাত বালতির মধ্যে পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর রৌদ্রজ্জ্বল দিনে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে  বিষ ছিটানোর পর ৭-১০ দিন পর্যন্ত পুকুরের পানি বিষাক্ত থাকে
                          চা বীজের খৈল  ১ কেজি  ১ ফুট এর বেশি না প্রয়োজনীয় খৈল বালতির মধ্যে ৩-৪ গুন পানিতে ভালভাবে গুলিয়ে রৌদ্রজ্জ্বল দিনে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে  বিষ ছিটানোর পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত পুকুরের পানি বিষাক্ত থাকে

                        চুন ও সার প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা: 
                        পুকুরে পিএইচ সমন্বয় করার জন্য চুন ও সার প্রয়োগ হয়ে থাকে। পুকুরে পিএইচ কম হলে অম্লত্ব কমে ফলে প্রয়োগ করতে হয় চুন। আর পিএইচ বেশী হলে অম্লত্ব বেড়ে যায় ফলে প্রয়োগ করতে হয় রাসায়নিক সার।আবার প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির উদ্দ্যেশেই পুকুরে সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

                        পানির pH নির্ণয়ঃ
                        pH হচ্ছে এসিড/অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের পরিমাপক যা 0 থেকে 14 মাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে 7 দ্বারা নিরপেক্ষ মান নির্দেশ করা হয় ।
                        pH মান 7-এর বেশী হলে ক্ষারত্বের মান নির্দেশ করে, আর 7-এর কম হলে এসিড/অম্লত্বের মান
                        নির্দেশ করে ।
                        পানির pH মানের দ্রুত উঠানামা মাছ চাষের জন্য ক্ষতিকর ।
                        মাছ চাষে পানির আদর্শ pH মাত্রা 7 থেকে 9
                        পানির pH মাপার পদ্ধতিঃ
                        ১. pH মিটার ।
                        ২. pH পেপার সহ চাকতি ।
                        * পানিতে এসিড/অম্লত্ব অর্থাৎ pH ৭ এর কম হলে শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি চুন দিতে হবে ।
                        * পানিতে ক্ষার হলে অর্থাৎ pH এর মান ৯ এর বেশী হলে রাসায়নিক সার দিতে হবে ।
                        * pH 7-এর বেশী হলে ক্ষার ।
                        * pH 7-এর কম হলে এসিড/অম্লত্ব ।
                        ------------------------------------------------
                        পানির পিএইচ মাছের খাদ্য চাহিদার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। অম্ল পানি মাছ চাষের জন্য ভাল নয়। এ ধরনের পানিতে মাছের ক্ষুধা হ্রাস পায় ও খাদ্য চাহিদা কমে যায়। ফলে মাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও উৎপাদন হ্রাস পায়। কোন জলাশয়ে পানির পিএইচ ৯.০- এর বেশি হলে এবং তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায় ও বৃদ্ধি শুন্যের কোঠায় দাঁড়ায়। পিএইচ মাত্রা ৭.০ থেকে ৮-৫ এর মধ্যে থাকলে মাছের খাদ্য চাহিদা বেশি থাকে ও উৎপাদন বেশি হয়।
                        -----------------------------------------------
                        মাগুর মাছের পোনা:

                        পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা 
                        • পুকুরে পোনা মজুদের আগে কিংবা পোনা ক্রয়ের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেয়া আবশ্যক
                        • এতে করে একদিকে যেমন পোনার বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি পাবে তেমনি উত্পাদনও বৃদ্ধি পাবে এবং রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে
                        • নিচে ভালো পোনা চেনার উপায়গুলো তুলে ধরা হলো-
                          পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা ভালো/খারাপ পোনা চেনার উপায় 
                            পর্যবেক্ষণের বিষয়  ভালো পোনা  খারাপ পোনা
                            পোনার চলাফেরা  চঞ্চলভাবে ছলাচল করে  স্থির থাকে কিংবা অলসভাবে চলাচল করে
                            পিচ্ছিল পদার্থ  শরীর পিচ্ছিল থাকে  শরীর খসখসে থাকে
                          গোলাকার পাত্রে রেখে স্রোত সৃষ্টি করলে  স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটে  পাত্রের মাঝখানে জমা হয়
                            শরীরের অবস্থা  ফুলকা এবং দেহে কোন দাগ থাকে না  দেহ, পাখনা ও ফুলকায় লাল দাগ থাকতে পারে
                          মাগুর মাছের পোনা পরিবহন পদ্ধতি: কৈ, শিং ও মাগুর মাছের পোনা পরিবহন রুইজাতীয় পোনা পরিবহনের মত হলেও একটু ভিন্নতা রয়েছে। এসব মাছ কাটাযুক্ত হওয়ায় বড় আকারের পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। শিং ও মাগুরের ছোট পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহন করাই উত্তম।

                          সাধারণতঃ বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে ৬৬ সেমি.  x ৪৬ সেমি. আকারের পলিথিন ব্যাগে পোনা পরিবহন করা হয়। প্রতিটি প্যাকেটে ২টি করে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করাই উত্তম। কোন কারণে যদি একটি ব্যাগ ছিদ্র হয়ে যায় তবে দ্বিতীয়টি পানি, অক্সিজেন ও পোনা রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

                          ২৫/৩০ দিনের মাগুর ৩০০-৪০০ গ্রাম (১৫/১৬ শত) পোনা ১৫-১৮ ঘণ্টার দুরত্বের রাস্তা পরিবহন করা যায়। কৈ, শিং ও মাগুর পোনা ৪-৬ ঘন্টার ভ্রমণে ১ কেজি- ১.৫ কেজি পর্যন্ত প্রতি ব্যাগে পরিবহন করা যায়। পরিবহনকালে পলিথিন ব্যাগ যাতে ছিদ্র হতে না পারে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। সম্ভব হলে পলিথিন ব্যাগ বস্তায় ভরে পরিবহন করতে হবে।

                          অন্যান্য পদ্ধতি :  উপরোক্ত পদ্ধতি ছাড়াও নিচে লিখিত পদ্ধতিতে পোনা পরিবহন করা যায়। 
                          ১. ইনসুলেটেড ট্যাংকে এরেটরের সাহায্যে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে পোনা পরিবহন করা যায়। 
                          ২. ক্যানভাস ট্যাংকের মাধ্যমে পিক-আপ বা অন্য কোন গাড়ী ব্যবহার করে এরেটর সেট করে পোনা পরিবহন করা যায়।
                          ৩. আজকাল ভ্যান গাড়ীতে মোটা পলিথিন কাগজ নিয়ে ক্যানভাস ট্যাংক তৈরি করেও পোনা পরিবহন করতে দেখা যায়।

                          পোনা পরিবহন করে খামারে নেওয়ার পর পুকুরে ছাড়ার পূর্বে পোনা শোধন করে নিতে হবে এবং এতে পোনা সুস্থ থাকবে এবং রোগ বালাই এর সম্ভাবনা কমে যাবে। পোনা নিম্নরূপেভাবে শোধন করা যাবে :

                          পোনা শোধন পদ্ধতি:

                          পোনা শোধন 
                          • পোনা মজুদের সময় যাতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো রোগজীবাণু পোনার সাথে পুকুরে প্রবেশ না করে সেজন্য পোনা ছাড়ার আগেই এ ব্যবস্থা নেয়া দরকার 
                          • পোনা শোধনে বিভিন্ন উপকরণ যেমন বড় বালতি, পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (ডাক্তারি পটাশ) বা লবণ, হাত জাল ও চা চামচ দরকার হয় 

                            পোনা শোধন পদ্ধতি  
                            পোনা শোধন পদ্ধতি


                            • মাছের পোনা শোধনের জন্য একটি বালতির মধ্যে ১০ লিটার পানিতে ১ চা চামচ পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশাতে হবে
                            •  অথবা একটি বালতির মধ্যে ১০ লিটার পানিতে ২০০ গ্রাম বা দুই মুঠ পরিমাণ লবণ মিশাতে হবে
                            • এ মিশ্রণে পোনাগুলোকে ৩০ সেকেন্ড গোসল করানোর পর পুকুরে ছাড়তে হবে
                            • ১০ লিটার পরিমাণ একটি মিশ্রণে একবারে ৩০০-৫০০টি পোনা শোধন করা যায়
                            • একই দ্রবণে ৪-৫ বার পোনা শোধন করার পর প্রয়োজন হলে আবার নতুন করে দ্রবণ তৈরি করতে হবে।

                              ডাক্তারি পটাশ বা লবণ পানি দিয়ে পোনা শোধন ছাড়াও এটিন্টবায়েটিক দিয়ে পোনাকে পুকুরে ছাড়ার সাথে সাথেই রোগমুক্ত বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, যেমন-

                              পুকুরে পোনা ছাড়ার পর Oxysaytin, Lenocide ইত্যাদি গ্রাম পজেটিভ, গ্রাম নেগেটিভ ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, ফ্যাংগাস, এ্যালজি ও প্রোটজোয়াজণিত মারাত্নক ক্ষতিকর রোগজীবাণুগুলোকে প্রতিরোধ ও নির্মূল করার জন্য ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া য়ায়। এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এমন ঔষধ পাওয়া যায়।
                              Lenocide লোরী/নাসারিাইড (তরল): ব্যবহারবিধি- ৫০০ মিলি/ ১০০ শতাংশ (যখন পানিরগভীরতা ২-৩ ফুট) ১০০০ সিসি /১০০ শতাংশ (যখন পানির গভীরতা ৫-৬ ফুট।
                               পোনা অভ্যস্থকরণ
                              • পোনা ছাড়ার পূর্বে পুকুরের পানির সাথে পোনাগুলোকে খাপ খাইয়ে নেয়ার পদ্ধতিই হচ্ছে অভ্যস্থকরণ
                              • পুকুরে পোনা ছাড়ার পরপরই নতুন পরিবেশে পোনা যেন শক না খায় সেজন্য আগে থেকেই পোনাগুলোকে নতুন পানির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে
                              • এ পদ্ধতি গ্রহণ না করলে পোনার মৃত্যু হার বেড়ে যাবে এমনকি সমস্ত পোনা মারা যেতে পারে 

                                পদ্ধতি 

                                অভ্যস্তকরণ পদ্ধতি
                                • যে পাত্রে  বা ব্যাগে পোনা পরিবহন করা হয় সে পাত্রটি / ব্যাগটি পুকুরের পানিতে ৩০ মিনিট ভাসিয়ে রেখে তাপমাত্রার সমতা আনতে হয়
                                • উভয় পানির তাপমাত্রা সমান হলে পাত্রটি পুকুরের দিকে কাত করে ধরে বাইরে থেকে ভেতরের দিকে স্রোতের ব্যবস্থা করতে হবে
                                •  এ অবস্থায় সুস্থ সবল পোনাগুলো স্রোতের বিপরীতে ধীরে ধীরে পুকুরে চলে যাবে 

                                  পোনা ছাড়া 
                                  • প্রথমে পোনাসহ পাত্র বা প্লাটিস্টিকের ব্যগগুলোকে ৩০মিনিট পর্যন্ত পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে, তারপর যখন পাতিলের বা ব্যাগের পানির তাপমাত্রা এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রা প্রায় সমান হবে, তখন পোনাগুলোকে লবন পানিতে গোসল করাতে হবে। এরপর সেগুলো আর একটি পানিভর্তি পাতিলে নিয়ে পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।
                                  •  পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার আগে পরিবেশের অবস্থা বিবেচনা করতে হবে
                                  • সাধারণত মৃদু ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পোনা ছাড়া ভালো
                                  • সকাল অথবা বিকাল সময়টা বেছে নেয়া ভালো
                                  • মেঘলা ও ভ্যাপসা আবহওয়ায় পোনা ছাড়া উচিত নয়

                                    তথ্যসূত্রঃ এফটিইপি, ১ঌঌ৮; মজিদ ও আলম, ২০০১; করিম, ২০০২ এবং ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ২০০২ ৷


                                    পোনা মজুদের/ছাড়ার পরে করণীয় 
                                    • পোনা বেঁচে থাকা পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব;
                                    • পোনা মজুদের পর ৩০দিন পর পর শতাংশ প্রতি ১৫০ গ্রাম হারে জিওলাইট অথবা ২৫০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে;
                                    • পুকুরে পোনা ছাড়ার - ঘণ্টা পর পুকুর পাড়ের কাছাকাছি পোনার চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করতে হবে;
                                    • প্রতি ১৫ দিনে একবার প্রোবায়োটিক ব্যবহার করলে মাছের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে  পানির পরিবেশ ভাল থাকবে;
                                    • প্রতি ১৫দিন অন্তর পানির গুণাগুণ যেমন পানির তাপমাত্রা, অক্সিজেন, পিএইচ, অ্যামোনিয়া ও মোট ক্ষারকত্ব নির্ণয় করা আবশ্যক;
                                    • এছাড়া প্রতিদিন ভোরে পুকুর পর্যবেক্ষণ করে কোনো পোনা মারা গেল কিনা দেখতে হবে;
                                    • পোনা মারা গেলে একই জাতের সমসংখ্যক পোনা আবার পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে;
                                    •  মাগুর মাছের দেহ স্বাভাবিক না থাকলে বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যায় না। এ কারণে পুকুরে 'প্রোবায়োটিক্স' (অ্যাকোয়া ম্যাজিক) ব্যবহারে পুকুরের তলদেশের পরিবেশ এবং মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে
                                    • মাছে যদি কোন রোগ বালাই নাও থাকে তারপরও এক মাস পরপর শতাংশে ১ কেজি চুন (১ কেজি চুনে ৩০ লিটার পানি) সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং আধা কেজি লবন সারের মত ছিটিয়ে দিতে হবে।
                                    • অক্সিজেনের অভাব হলে শতকে ২০০ গ্রাম জিওলাইট সারের মত ছিটিয়ে দিতে হবে।
                                      চাষ চলাকালে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
                                    • চাষ চলাকালে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ ঠিক রাখতে নিয়মিত সার ব্যবহার করতে হবে
                                    • পুকুরে প্রয়োজনীয় মাত্রায় জৈব  অজৈব সার একত্রে প্রয়োগ করতে হয়
                                    • নির্দিষ্ট পরিমাণ সার পাত্রের মধ্যে তিনগুন পানিতে গুলিয়ে ১২-২৪ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে
                                    • এরপর গুলানো মিশ্র সার সমানভাবে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে
                                    • পুকুরে চাষ চলাকালে প্রতিদিন সারের নমুনা মাত্রা নিম্নে দেওয়া হলো


                                        সার                          প্রতি শতাংশে
                                        গোবর অথবা                         ২০০-২৫০ গ্রাম
                                        কম্পোষ্ট অথবা                         ৩০০-৪০০ গ্রাম
                                        হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা                         ১৫০-২০০ গ্রাম
                                        ইউরিয়া                         ৪-৫ গ্রাম
                                        টিএসপি                        ৩ গ্রাম
                                        চুন                        ২০০ গ্রাম (মাসিক)


                                      সার প্রয়োগে সতর্কতা 
                                      • রৌদ্রউজ্জ্বল দিনে সকাল ১০-১১ টার মধ্যে গুলানো সার পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে
                                      • মেঘলা অথবা বৃষ্টির দিনে সার প্রয়োগ করা যাবে না।
                                      সম্পুরক খাদ্য 
                                      • পুকুরে যখন মাছের ওজন বাড়তে থাকে তখন প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি বাইরে থেকে অতিরিক্ত যে খাদ্য প্রয়োগ করতে হয় তাই সম্পূরক খাদ্য
                                      • মজুদ ঘনত্ব বেশি হলে প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের খাদ্য চাহিদা পুরণ করতে পারে না তাই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়

                                        খাদ্যের উপকরণ
                                         দেশী মাগুরের সম্পূরক খাদ্য হিসাবে চালের কুড়া, গমের ভুসি, সরিষা বা তিলের খৈল, ফিসমিল, চিটাগুড়, রক্তের গুঁড়া, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির নাড়ি ভুঁড়ি, শামুক-ঝিনুকের মাংস ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়
                                        খাদ্য তৈরি পদ্ধতি
                                        • চালের কুড়া ২০ ভাগ, গমের ভুসি ১৫ ভাগ, খৈল ২০ ভাগ, ফিসমিল ৪০ ভাগ ও চিটাগুড় ৫ ভাগ একসাথে ভালভাবে মিশিয়ে খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে 
                                        • অথবা খৈল ৩৫ ভাগ, চালের কুড়া ৩৫ ভাগ এবং রক্তের গুঁড়া ৩০ ভাগ হারে মিশিয়ে খাবার তৈরি করা যেতে পারে 
                                        • খাদ্য বলগুলো প্রয়োজনে রৌদ্রে একটু শুকিয়ে নেয়া যেতে পারে 
                                        • এরপর খাদ্যদানীতে করে নির্দ্দিষ্ট সময়ে তা প্রয়োগ করতে হবে 
                                        • এছাড়া পরিমিত পরিমণে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির নাড়ি ভুঁড়ি, শামুক-ঝিনুকের মাংস খাওয়ানো যেতে পারে 
                                          পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করার পদ্ধতি
                                          নিম্নরূপ উপায়ে পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে:
                                          • সমস্ত পুকুরে সমান ভাবে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা
                                          • নির্ধারিত স্থানে প্রয়োগ করা
                                          • খাদ্যদানীতে প্রয়োগ করা। খাদ্যদানীতে খাদ্য সরবরাহ করলে খরচ বাঁচে এবং অপচয় কম হয়, দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে ৩ ফুট আয়তনের বাঁশের ফ্রেমে মশারির জাল লাগিয়ে এ খাদ্যদানী তৈরি করা যায়। খাদ্যদানী পুকুরের পানির উপরিভাগ থেকে ১ ফুট নিচে স্থাপন করতে হবে এবং পাড় থেকে ১-২ মিটার দুরে স্থাপন করতে হবে৩০ শতাংশের পুকুরে ২টি, ৬০ শতাংশের পুকুরে ৪টি, এই হারে খাদ্যদানী স্থাপন করা যেতে পারে 
                                          • খাবার একটি ছিদ্র যুক্ত ব্যাগে ভরে পানিতে ঝুলিয়ে দেয়া।
                                          • খাদ্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে পরিমিত পরিমাণ প্রয়োগ করতে হবে
                                          • পানি অতিরিক্ত সবুজ বা দূষিত হয়ে পড়লে বা বৃষ্টি হলে খাদ্য প্রয়োগ কমাতে হবে
                                          পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ মাত্রা
                                          মাছের খাদ্য গ্রহণ মাত্রা নির্ভর করে পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীর অনুকুল অবস্থার ওপর। তাপমাত্রা বাড়লে মাছের বিপাকীয় কার্যক্রমের হার বেড়ে যায়। ফলে খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে পানির তাপমাত্রা কমে গেলে খাদ্য চাহিদাও কমে যায়। পানির তাপমাত্রা ১০ ডি. সে. এর বেশি হলে খাদ্য গ্রহণ মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়, একই ভাবে তাপমাত্রা ১০ ডি. সে. কমে গেলে মাছের খাদ্য গ্রহণ হার অর্ধেকে নেমে য়ায়। পনির পিএইচ ৭-৮.৫০ ও পানিতে দ্রুবিভূত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়লে মাছের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিপরীতভাবে পিএইচ ও অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবার কারণে খাদ্য গ্রহণ কমে যায়। এ ছাড়াও মাছ ছোট অবস্থায় তুলনামূলক বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে।

                                          পুকুরে শিং মাছের পোনা মজুদের পর প্রথম ১০ দিন দৈনিক মাছের ওজনের ২০% খাবার প্রয়োগ করতে হয়। ছোট থাকা শিং মাছ সাধারণত রাতের বেলায় খেতে পছন্দ করে; তাই ২০% খাবারকে দু’বেলায় সমান ভাগ করে সন্ধ্যার পর অর্থাৎ ভোরের দিকে একটু অন্ধকার থাকতে পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়। মাছ মজুদের পরের ১০ দিন ১৫% হারে এবং এর পরের ১০ দিন মাছের ওজনের ১০% হারে পুকুরে খাবার প্রয়োগ করতে হয় একই নিয়মে। এভাবে এক মাস খাবার প্রয়োগের পর ৫% হারে পুকুরে খাবার দিতে হবে। শিং মাছ ছোট থাকা অবস্থায় রাতে খাবার খেলেও ৩ ইঞ্চির মত সাইজ হওয়ার সাথে সাথে দিনের বেলাতে খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যার পর যে খাবার দেয়া হত সেটি সন্ধ্যার একটু আগে এগিয়ে এনে আস্তে আস্তে বিকেলে দিতে হবে। অন্যদিকে ভোর বেলার খাবারও এমনি করে সকাল ৯/১০ টার দিকে পিছিয়ে নিতে হবে। শিং মাছের ওজন ১৫ গ্রাম হলে ৩% এর অধিক খাবার দেয়া মোটেই ঠিক নয় এবং বিক্রির আগ পর্যন্ত এই নিয়মই বজায় রাখতে হবে। পুকুরে বেশি পরিমাণ খাবার দিলে পানি নষ্ট হয়ে যেতে পারে যা শিং মাছ চাষের একটি বড় অন্তরায়।


                                          শিং ও মাগুর মাছের দৈহিক ওজনের সাথে খাদ্য প্রয়োগের মাত্রার সম্পর্ক:

                                          গড় ওজন (গ্রাম)                        দৈনিক খাদ্যের পরিমান (%)
                                          ১-৩                                           ১৫-২০
                                          ৪-১০                                          ১২-১৫
                                          ১১-৫০                                        ৮-১০
                                          ৫১-১০০                                      ৫-৭
                                          >১০১                                         ৩-৫

                                          যেমন: ৪০ শতাংশের একটি পুকুরে যদি প্রতি শতাংশে ১৫০টি ঘনত্বে প্রতিটি ৩ গ্রাম ওজনের ২০০০০টি মাগুর মাছ থাকে তাহলে মাছের মোট দৈহিক ওজন হবে ৩ গ্রাম × ২০০০০ = ৬০ কেজি। ২০% হারে খাদ্য প্রয়োগ করলে দৈনিক ১২ কেজি খাদ্য উক্ত পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।



                                          ৩৫শতক পুকুরে ২০০০০টি পোনার ৪ মাসের সম্ভাব্য মোট খাদ্য:

                                          সময়গড় ওজনমোট খাদ্য (কেজি)
                                          ১ম ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ১০% হারেগড় ওজন ১ গ্রাম ধরে২০
                                          ২য় ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৫% হারেগড় ওজন ৮ গ্রাম ধরে৮০
                                          ৩য় ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৪% হারেগড় ওজন ১৫ গ্রাম ধরে১২০
                                          ৪র্থ ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৪% হারেগড় ওজন ২৫ গ্রাম ধরে২০০
                                          ৫ম ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৪% হারেগড় ওজন ৩৫ গ্রাম ধরে২৮০
                                          ৬ষ্ঠ ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৪% হারেগড় ওজন ৪৫ গ্রাম ধরে২৭০
                                          ৭ম ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৩% হারেগড় ওজন ৫৫ গ্রাম ধরে৩৩০
                                          ৮ম ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৩% হারেগড় ওজন ৬৫ গ্রাম ধরে৩৯০
                                          ঌম ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৩% হারেগড় ওজন ৭৫ গ্রাম ধরে৪৫০
                                          ১০ম ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৩% হারেগড় ওজন ৮৫ গ্রাম ধরে৫১০
                                          ১১তম ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৩% হারেগড় ওজন ৯৫ গ্রাম ধরে৫৭০
                                          ১২তম ১০ দিন গড় দৈহিক ওজনের ৩% হারেগড় ওজন ১০৫ গ্রাম ধরে৬৩০
                                          মোট৩৮৫০

                                          সাধারণত পুকুরে দৈনিক ২ বার খাদ্য পরিবেশন করতে হয়। মোট খাবারের এক চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক সকালে (১০-১১টা) এবং অর্ধেক থেকে তিন চতুর্থাংশ বিকেলে (৩-৪ টা) দেওয়া ভাল। শুরুর দিকে মোট মাছের ওজনের ৫-১০ শতাংশ এবং পরের দিকে  মোট মাছের ওজনের ৩-৪ শতাংশ হারে সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে (মৎস্য অধিদপ্তর, ২০০২ এবং সিদ্দিকী ও চৌধুরী, ১৯৯৬)।

                                          সম্পুরক খাদ্য তৈরী:
                                          মৎস্য অধিদপ্তর (২০০২) অনুসারে  চালের কুঁড়া ৪০ ভাগ, সরিষা বা অন্যান্য তৈলবীজের খৈল ৩০ ভাগ এবং ফিশমিল বা শুঁটকী ৩০ ভাগ একত্রে মিশিয়ে মাগুর বা শিং মাছের খাদ্য তৈরি করা যায়। আগের দিন চালের কুঁড়া ও খৈল সমপরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তার সাথে ফিশমিল মিশিয়ে গোলাকার বল আকারের খাদ্য তৈরি করে সহজেই সরবরাহ করা যেতে পারে। 

                                          অথবা-
                                          একমাত্র খৈল বাদে অন্য উপাদানগুলো উলি্লখিত অনুপাতে বেশি পরিমাণে মিশ্রিত করে একটি মিশ্রণ তৈরি করে রাখতে হবে। অতঃপর প্রতিদিন মাছের দৈহিক ওজন অনুযায়ী যে পরিমাণ খাদ্য হবে তার তিনভাগ তৈরিকৃত মিশ্রণ থেকে এবং অন্য একভাগ খৈল পানিতে ৬-১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তার মধ্যে উক্ত মিশ্রণ মিশিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করে রাখতে হবে।

                                          এছাড়া, শিং ও মাগুর মাছের জন্য নিম্নহারে (Composition) খাদ্যের বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে স্বল্প মূল্যে কিন্তু ভালমানের খাদ্য প্রস্ত্তত করা যেতে পারে।



                                          ক্রমিক নংউপকরণের নামশতকরা হার
                                          1ফিশমিল20
                                          2সোয়বিন চূর্ণ 8
                                          3অটোকুড়া   30
                                          4  ভুট্টাচূর্ণ       5
                                          5গমের ভুসি12
                                          6চিটাগুড়/রাব5
                                          7সরিষার খৈল20
                                          8ভিটামিন প্রিমিক্স১গ্রাম/কেজি

                                          অথবা



                                          ক্রমিক নংউপকরণের নামখাদ্যের শতকরা হারপ্রোটিন শতকরা হারমোট প্রোটিন (%)
                                          1ফিশমিল405020
                                          2সয়াবিন চূর্ন5301.5
                                          3চালের কুড়া25102.5
                                          6আটা/ময়দা5170.85
                                          7সরিষার খৈল25256.25
                                          8ভিটামিন প্রিমিক্স১গ্রাম/কেজি
                                          মোট (কেজি)10031.1
                                          সরিষার খৈল খাদ্য প্রস্ত্ততের ২৪ ঘন্টা পূর্বেই পরিমাণমত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে অত:পর অন্য সব উপকরণের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে খাদ্য প্রস্ত্ততের সময় পানি এমনভাবে মিশাতে হবে যেন খাবার অনেকটা শুকনা খাবারের মত হয়। তা ছাড়া শামুক ও ঝিনুকের মাংস মাগুরের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। এগুলোও অবাধে খাওয়ানো যায়।

                                          বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের পুষ্টি মান


                                          উপাদানআমিষশর্করাচর্বি
                                          চালের কুঁড়া১১.৮৪৪.৪২১০.৪৫
                                          গমের ভুসিঁ১৪.৫৭৬৬.৩৬৪.৪৩
                                          সরিষার খৈল৩০.৩৩৩৪.৩৮১৩.৪৪
                                          তিলের খৈল২৭.২৫৪.৯৭১৩.১৮
                                          ফিসমিল-এ গ্রেড৫৬.৬১৩.৭৪১১.২২
                                          ব্লাড মিল৬৩.১৫১৫.৫৯০.৫৬
                                          সার প্রয়োগ:
                                          দাশ (১৯৯৭) অনুসারে পোনা ছাড়ার পর প্রতি মাসে শতাংশ প্রতি ৩৫-৪০ কেজি গোবর ও সমান অনুপাতে ৬০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া ও টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সার মাটির সাথে মিশিয়ে দলা করে প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

                                          শিং ও মাগুর মাছ চাষে অন্যান্য ঝুঁকি
                                          শিং ও মাগুর মাছ চাষে ঋতুভিত্তিক কিছু ঝুঁকি থাকে। তাই সঠিক ব্যবস্থাপনা না নিলে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি অনেক সময় সমস্ত চাষ ব্যবস্থা হুমকির সম্মূখে পড়তে পারে।
                                          ক) বর্ষাকালীন ঝুঁকি ঃ বর্ষাকালীন অতিবৃষ্টি বা বন্যায় সমস্ত মাছ ভেসে যেতে পারে। হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে পরিপক্ব মাগুর পুকুরের পাড় বেয়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে। এ কারণে পুকুরের পাড়ের চারিদিকে বাঁশের বানা বা বেড়া অথবা প্পাস্টিক নেটের সাহায্যে ১.৫ ফুট উচু করে বেষ্টনি দেয়া যেতে পারে।

                                          খ) শুষ্ক মৌসুমের ঝুঁকি : শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে পানির গভীরতা কমে যেতে পারে। এতে পানির তাপমাত্রা বেড়ে পানিতে দ্রবিভুত অক্সিজেন স্বল্পতার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য পানি সেচের মাধ্যমে পুকুরের পনির গভীরতা বাড়াতে হবে।

                                          গ) শীতকালীন ঝুঁকি : শীতে (১৫০ সে. তাপের নিচে) শিং ও মাগুর মাছ চাষে রোগের প্রাদূর্ভাব বেশি হয় সে জন্য শীতের ২-৩ মাস শিং ও মাগুর মাছ চাষ না করাই ভাল। তবে এ সময়ে মাছ বা পোনা সংরক্ষণের জন্য প্রতি দিন ভোরে ডিপটিউব-ওয়েল এর পানি দিয়ে পানির তাপমাত্রা বাড়িয়ে রাখা যায়।

                                          ঘ) ক্ষতিকর গ্যাস : খাদ্যের অবশিষ্টাংশ এবং মাছের মলমূত্রের কারণে পুকুরের তলদেশে ক্ষতিকর গ্যাস জমে বুদবুদের সৃষ্টি করতে পারে এবং পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। পুকুরের তলদেশে জমে থাকা ক্ষতিকর গ্যাস অপসারণের জন্য ২-৩ দিন পর পর দুপুরের সময় পানিতে নেমে তলদেশ আলোড়িত করার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজটি হররা টেনেও করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। জিওলাইট প্রয়োগেও ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

                                          ঙ) মাছের স্বাভাবিক রং না আসা : অধিক ঘনত্বে শিং ও মাগুর মাছ চাষ করলে মাছের গায়ের স্বাভাবিক রং আসে না। এতে ভোক্তার কাছে মাছের গ্রহণ যোগ্যতা কমে যায়, ফলে বাজার দর কম পাওয়া যায়। এ সমস্যা দুর করার জন্য মাছ বাজারজাত করার কমপক্ষে ১৫ দিন পূর্বে পুকুরের ১/৪ অংশে কচুরী পানা অথবা টোপা পানা দেয়া যেতে পারে। তবে বাজারজাত করার পর কচুরী পানা অপসারণ করে ফেলে দিতে হবে।

                                          মাগুর মাছের রোগ ও প্রতিকার-
                                          সাধারণতঃ মাগুর মাছ চাষের পুকুরে তেমন কোন রোগব্যাধি হয় না। তবে শীতে এবং পানির পরিবেশ দূষণে গায়ে সাদা দাগ বা ক্ষত রোগ দেখা দিয়ে থাকে। প্রথমেই পুকুরের পানির পরিবেশ উন্নয়নের জন্য শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন দিতে হবে অথবা ৫০০-৭৫০ গ্রাম হারে জিওলাইট প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং পুকুরের পানি আংশিক পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। চাষিকে মনে রাখতে হবে যে মাছের রোগের চিকিৎসা করার চেয়ে মাছে যাহাতে রোগ না হয সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই উত্তম। আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে শীতের শুরুতে একই হারে পুকুরে চুন ও লবণ প্রয়োগ করলে শীতকালে এ রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

                                          পুকুরের পরিবেশ: মাছের বিচরণভূমি পুকুরের পানি ও তলদেশের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখা গেলে চাষিরা রোগ-ব্যাধি থেকে মাছকে সহজে রক্ষা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে পানির পিএইচ রক্ষা, দূষিত গ্যাস থেকে মুক্তি, পুকুরে উপকারী অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারলে লাভবান হবে। পুকুরে নিয়মিত জিওলাইট ও প্রোবায়োটিক্সের সমন্বয় অ্যাকোয়া ম্যাজিক (Aqua Magic) অথবা প্রোবায়োটিক্স পন্ড প্লাস (Pond Plus) ব্যবহারে নিশ্চিতভাবেই উপকৃত হতে পারে। ##এছাড়া,  আমাদের দেশে কৈ, শিং ও মাগুর চাষে ক্ষতরোগ দেখা গেছে এবং কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ সমস্যা হলেও পুকুর প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পাদন করার পর চাষকালে প্রতি মাসে একবার পানিতে 'জিওলাইট' এবং ৪০ দিন অন্তর প্রোবায়োটিকস 'গোল্ডেন ব্যাক' প্রয়োগ করা আবশ্যক। 
                                          ----------------------------------------
                                          pond plus ব্যবহারের নিয়ম: প্রতি ৩৫ শতাংশে ৫০ গ্রাম, প্রতি ১০ দিন অন্তর।
                                          Aqua Magic ব্যবহারের নিয়ম: প্রতি একরে (১মিটার গভীরতা) ৫কেজি হিসেবে, ৩০ শতাংশের জন্য ১.৫ কেজি। এর সাথে ১৫০ গ্রাম চালের কুঁড়া ও ৫০ গ্রাম চিনি ৫ লিটার পানিতে ৫ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
                                           
                                          মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ:

                                          মাছ ধরার পদ্ধতি

                                          • দেশী মাগুর বাজার আকারে পৌঁছলে সমস্ত মাছ একবারেই ধরে বাজারজাত করতে হবে
                                          • আহরণের সময়ে প্রথমত জাল টেনে অধিকাংশ মাছ ধরে ফেলতে হবে
                                          • অবশিষ্ট মাছগুলো পুকুরের তলদেশ শুকিয়ে ধরে ফৈলতে হবে
                                          • আবার পরবর্তী মৌসুমে নতুনভাবে মাছ চাষ শুরু করতে হবে

                                            কেবলমাত্র জাল দিয়ে এই মাছ আহরণ করতে গেলে ৪০-৫০ শতাংশ মাছ পুকুরেই থেকে যায়। তাই চূড়ান্ত আহরণের জন্য পুকুর শুকিয়ে মাছ আহরণ করা আবশ্যক। মাগুর মাছ ৮-১০ মাস ও শিং ৪-৬ মাসের মধ্যে ধরার উপযোগী হয় (হক, ২০০৬)।
                                            সাধারণত ১০০-১৫০ গ্রাম হলেই এই মাছ আংশিকভাবে আহরণের উপযোগী হয়।
                                            উল্লেখিত ব্যবস্থাপনায় উচ্চ মজুদ ঘনত্বে বড় আকারের পোনা ছেড়ে এক শতাংশ আয়তনের পুকুর থেকে ছয়-আট মাসে ১৬-১৮ কেজি শিং/মাগুর মাছ পাওয়া সম্ভব। একইভাবে আংশিক আহরণের পর সমসংখ্যক পোনা পুনরায় মজুদ করার সম্ভব হলে একই আয়তনের পুকুর থেকে সারা বছরে ২৪-২৫ কেজি শিং/মাগুর মাছ পাওয়া সম্ভব।


                                            এক নজরে-1
                                            ==============================
                                            1. পুকুর সেচের পর প্রয়োজনীয় জৈব সার সমান ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
                                            2. পুকুর শুকানোর - দিন পর বা বিষ প্রয়োগের - দিন পর চুন ব্যবহার করতে হবে।
                                            3. পুকুর শুকানো সম্ভব হলে শুকনো চুন এবং সম্ভব না হলে চুন তরল করে পুকুরে দিতে হবে।
                                            4. পুকুর শুকানো হলে চুন প্রয়োগের - দিন পর পুকুরে ২/৩ ফুট পানি সরবরাহ করতে হবে, তবে চুন ছাড়াও জিওলাইট (প্রতি শতকে -২কেজিপুকুর প্রস্তুতির সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।অথবা ৫০ ভাগ চুন ও ৫০ভাগ জিওলাট একত্র করে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
                                            5. পুকুরে পানি ভরাটের ৫-৭ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হবে (মেঘলা ও বৃষ্টির দিনে সার প্রয়োগ নয়)।
                                            6. সার প্রয়োগের - দিন পর পুকুরে খাদ্য তৈরী হলে মাছের পোনা মজুদ করতে হবে।
                                            7. পুকুরে পোনা ছাড়ার পূর্বে পোনাকে পুকুরের পানির সাথে অভ্যস্ত করে নিতে হবে, এজন্য মাছের ব্যাগগুলোকে ৩০মিনিট পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
                                            8. এরপর পোনাকে লবন পানিতে ৩০ সেকেন্ড করে শোধন করে নিতে হবে।
                                            9. এরপর সকালে কিংবা বিকেলের মৃদু ঠান্ডা আবহাওয়ায় (পুকুরে পোনা ছাড়াতে হবে, মেঘলা  ভ্যাপসা আবহওয়ায় পোনা ছাড়া উচিত নয়।


                                            এক নজরে-2 (জিনিষপত্র)
                                            ==============================
                                            1. প্রতি শতাংশে প্রতি ফুট গভীরতার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম রোটেনন পাউডার , যদি পুকুর না শুকানো যায়।
                                            2. শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন, মোট ৩৫শতাংশের জন্য ৩৫কেজি পাথুরে চুন অথবা সমান ওজনের জিওলাইট
                                            3. অথবা ৫০ ভাগ জিওলাইট ও ৫০ ভাগ চুন একসাথে প্রয়োগ করা যায়।
                                            4. পুকুর প্রস্তুতির জন্য ৩৫শতাংশের জন্য গোবর ১৭৫কেজি, বা কমপোস্ট ২৮০কেজি, বা হাঁস-মুরগীর বিস্টা ১৭৫কেজি
                                            5. ইউরিয়ার ৪ কেজি, টিএসপি ৩ কেজি, এমপি সার ১ কেজি
                                            6. সেকিডিস্ক
                                            7. পোনা শোধনের জন্য একটি বালতি, ঘন জাল, ৮ কেজি লবন, Lenocide ২৫০ সিসি
                                            8. পোনা ছাড়ার জন্য বড় ২টি বড় পাতিল
                                            9. পুকুরে চাষ চলাকালিন সময় ইউরিয়া ৩৫ শতাংশের জন্য ১৭৫ গ্রাম দৈনিক (মাসে ৬কেজি), ১০৫গ্রাম টিএসপি (মাসে ৩ কেজি), ৭ কেজি গোবর (মাসে ২১০ কেজি), ৭ কেজি চুন (মাসিক)।
                                            10. pH মিটার
                                            11. মশারীসহ বাশেঁর ফ্রেম-১বর্গমিটার (২টি)(খাদ্যদানীর জন্য)
                                            12. সম্পুরক খাবারের জন্য: চালের কুড়া ২০ কেজি, গমের ভুসি ১৫ কেজি, খৈল ২০ কেজি, ফিসমিল ৪০ কেজি, চিটাগুড় ৫ কেজি। অথবা- চালের কুড়া ৩০ কেজি, সয়াবিন চূর্ণ ৮ কেজি, ভুট্টা চূর্ণ ৫ কেজি, গমের ভুসি ১২ কেজি, চিটাগুড়/রাব ৫ কেজি, খৈল ২০ কেজি, ফিসমিল ২০ কেজি, ভিটামিন প্রিমিক্স (এমবাভিট-জি) ২০গাম/১০ কেজি খাবার, অথবা, খৈল ৩৫ কেজি, ফিসমিল ৩৫, চালের কুড়া ২৫ কেজি এবং আটা ৫ কেজি।(মোট ৩৩% প্রোটিন)
                                            13. সম্পুরক খাবার দরকার দৈনিক ১০কেজি, মাসে ৩০০ কেজি


                                            ৩৫ শতাংশ পুকুরের আয় ব্যয়ের হিসাব



                                            আইটেমদ্রব্যাদির মোট পরিমাণ (কেজি)সম্ভাব্য একক দর টাকামোট ব্যয় (টাকা)নোট
                                            মজুদ পূর্ব ব্যবস্থাপনা
                                            পকুর ভাড়া
                                            পুকুর প্রস্তুত
                                            চুন৪২২৫১০৫০১ কেজি হারে
                                            জিওলাইট৩৫২৫৮৭৫১ কেজি হারে
                                            মজুদকালীন ব্যবস্থাপনা
                                            গোবর১৭৫৩৫০
                                            ইউরিয়া১০২০২০০শতকে ২০০গ্রাম
                                            টি এস পি২৫১৫০শতকে ১০০গ্রাম
                                            এমপিও সার২৫২৫শতকে ২০গ্রাম
                                            পোনা২০০০০২.৫০৫০০০০১০% মৃত্যুহার ধরে, ৮০% মাগুর পোনা মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে।
                                            খাদ্য
                                            ফিসমিল৮০০৭৪৫৯২০০
                                            সরিষার খৈল৮০০৩৪২৭২০০
                                            গমের ভুসি৪৮০৩২১৫৩৬০
                                            সয়াবিন চূর্ণ৩২০৬০১৯২০০
                                            অটোকুড়া১২০০১৮২১৬০০
                                            ভুট্টা চূর্ণ২০০১৫৩০০০
                                            চিটাগুড়২০০৪০৮০০০
                                            ভিটামিন প্রিমিক্স২৮০১৮০০
                                            মোট:৪৩২০২০৮০১০
                                            মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
                                            পরিচালনা, শ্রমিক মজুরী, মাছ ধরা ও অন্যান্য১০০০০
                                            মোট ব্যয়২১৮০১০
                                            ৮ মাসে গড়ে ৯৫ গ্রাম হিসাবে ১৮০০০ হাজার মাছের মোট উৎপাদন১৭১০কেজি
                                            বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি ৫০০/- টাকা৮৫৫০০০টাকা
                                            মোট ব্যয়:২১৮০১০টাকা
                                            নিট মুনাফা৬৩৬৯৯০টাকা