শুষ্ক মৌসুমে মাছ চাষে করণীয়



এখন গ্রীষ্মকাল সময় আমাদের দেশের পুকুর, ডোবা, নদী-নালায় পানি প্রায় শুকিয়ে যায় মাছ চাষের ক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে যা যা করণীয় সে সম্পর্কে এখানে কিছুটা আলোকপাত করা হলো

. পুকুর প্রস্তুতি
পুকুরে সব ধরনের মাছ চাষে পুকুর প্রস্তুতির জন্য সময়ই উত্তম পুকুর প্রস্তুতির উদ্দেশ্য হলো চাষযোগ্য মাছের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা 
নতুন পুকুরে বৃষ্টির পানিতে পাড় ভেঙে যাতে পুকুরের পানি ঘোলা না হয় তার জন্য পাড়ে ঘাস লাগাতে হবে
পুরনো পুকুরে প্রয়োজনে পাড় মেরামত করা উচিত পাড়ের গাছ ছায়া দিলে ডালপালা কেটে দিতে হয়
পুকুরের তলায় পচা কাদা থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে
পুকুরে জলজ আগাছা থাকলে শিকড়সহ উঠিয়ে ফেলতে হবে আগাছাসমূহ পুকুরের এক কোণে স্তুপাকারে রেখে কম্পোস্ট সার তৈরি করা যেতে পারে

আগামী মৌসুমে মাছ চাষের জন্য মৌসুমেই পুকুর শুকিয়ে ফেলে বাজে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করতে হবে পুকুরে পানি শুকানো সম্ভব না হলে বার বার ঘন ফাঁসের জাল টেনে অচাষযোগ্য মাছ তুলে ফেলতে হবে-

পুকুর শুকানো সম্ভব হলে প্রতি শতাংশে কেজি চুন গুঁড়া করে তলা পাড়ে সমভাবে ছিটিয়ে দিয়ে পুকুরের তলা চাষ দিয়ে চুন মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে
পানিভর্তি পুকুরে প্রতি শতাংশে ফুট পানির জন্য কেজি চুন পানিতে গুলিয়ে ঠাণ্ডা করে পুকুরের পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে

পুকুরের পরিবেশকে উপযুক্ত রাখতে চুন প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই চুন মাটিতে বিদ্যমান পুষ্টিকর উপাদান মাটি হতে পানিতে মুক্ত করে প্রাকৃতিক খাবার তৈরিতে এবং মাছের রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে চুন প্রয়োগের - দিন পর মাছের প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদনের জন্য পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে

সম্পূর্ণ শুকানো পুকুরের তলায় শতাংশপ্রতি ১০ কেজি গোবর অথবা কম্পোস্ট সার দেয়া যেতে পারে
পানিভর্তি পুকুরে শতাংশপ্রতি ১০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ১০০ গ্রাম টিএসপি একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে

. নার্সারি পুকুর তৈরি
আগাম পোনা উৎপাদনে আগ্রহী চাষিরা পোনা উৎপাদনের জন্য নার্সারি পুকুর তৈরি করে রাখতে পারেন ক্ষেত্রের মার্চ মাসে রেণু উৎপাদনকারী খামারিদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে
নার্সারি পুকুরের গুরুত্ব বৈশিষ্ট্য
নার্সারি পুকুর আয়তকার এবং ছোট হতে হবে
নার্সারি পুকুরের আয়তন ২৫-৩০ শতাংশ হতে পারে গভীরতা -. মিটার এবং পুকুরের ঢাল : অনুপাতে হলে ভালো হয়
বড় পুকুর হলে নার্সারি ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়
পুকুরের তলা সমান হতে হবে
মাটির গঠন দো-আঁশ/বেলে দো-আঁশ
তলায় কাদার পরিমাণ .০০-. সেমি.
পুকুরে দৈনিক সূর্যালোক - ঘণ্টা থাকতে হবে
পাড়ে ছায়া সৃষ্টিকারী গাছ বা ঝোপ থাকবে না
পুকুর পাড়ে উঁচু শক্ত বাঁধ দিতে হবে
ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য পুকুরের অবস্থান বাড়ির কাছাকাছি হলে ভালো হয়প্রস্তুতি
নার্সারি পুকুরের পানি শুকিয়ে নিয়ে তলার অতিরিক্ত কাদা সরিয়ে ফেলুন পুকুরের তলা রোদে শুকিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়
শুকানো পুকুরের তলায় শতাংশপ্রতি কেজি চুন প্রয়োগ করে মাটি শোধন করে নিতে হবে
রেণু ছাড়ার কমপক্ষে ১৫ দিন আগে নার্সারি পুকুরে -. ফুট পানি ভরতে হবে, এতে পুকুরে রেণু পোনার জন্য খাবার তৈরি হবে
নার্সারি পুকুরে রেণু ছাড়ার আগে ঘন মশারির কাপড়ের জাল টেনে ব্যাঙাচি, অন্যান্য মাছের পোনা পোকা-মাকড় সরিয়ে ফেলুন পরিমাণমতো সার দিন
কার্পজাতীয় মাছের ক্ষেত্রের পোনা উৎপাদন দুইভাবে করা যায়- সার খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে জিওল মাছের ক্ষেত্রের খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে পোনা  উৎপাদন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে

পুকুর প্রস্তুতকালীন সার প্রয়োগ
রেণু পোনার প্রাকৃতিক খাবার হলো প্রধানত উদ্ভিদ পৱাঙ্কটন প্রাণী পক্ষঙ্কটন প্রাণী পৱাঙ্কটনের উৎপাদন নির্ভর করে উদ্ভিদ পৱাঙ্কটনের প্রাচুর্যতার ওপর আর উদ্ভিদ পৱাঙ্কটন তাদের বাঁচার জন্য দ্রবীভূত পুষ্টির ওপর নির্ভরশীল অর্থাৎ প্রাকৃতিক খাদ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যই পুকুরে সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে
সার দুই প্রকার : () জৈব সার, () অজৈব সার

সার প্রয়োগের মাত্রা 
রেণুর খোঁজ পেলে রেণু পোনা সংগ্রহের প্রস্তুতি নিন
রেণু ছাড়ার তৃতীয় দিন হতে পুকুরে পরিপূরক খাবার দিন
রেণু মজুদের ঘনত্ব নির্বাচন : নার্সারি ব্যবস্থাপনায় পুকুরে রেণু মজুদের ২টি পদ্ধতি আছে-
এক ধাপ পদ্ধতি : -১০ গ্রাম/শতাংশ
দুই ধাপ পদ্ধতি : ৩০-৩৫ গ্রাম/শতাংশ

ধানী মজুদের ঘনত্ব নির্বাচন : পুকুরে ধানী মজুদ দুভাবে করা যায়-
. বেশি সময়ের জন্য (৫০-৬০ দিন) : শতাংশে মজুদ হার ১৬০০-২০০০টি ধানী মজুদ করলে র্র্৩র্ -র্৪র্  সাইজের পোনা পাওয়া যেতে পারে
. কম সময়ের জন্য (২৫-৩০ দিন) শতাংশে মজুদ হার ৫০০০-৬০০০টি ধানী মজুদ করলে .র্৫র্ -.র্০র্  সাইজের পোনা পাওয়া যেতে পারে

নার্সারি পুকুরে রেণু/ধানীর খাদ্য ব্যবস্থাপনানার্সারি পুকুরে খাদ্য প্রয়োগের হার পানির ভৌত রাসায়নিক গুণাবলি ছাড়াও পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা, চাষ ব্যবস্থাপনা, খাদ্যের অবস্থা ও পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ছোট অবস্থায় পোনার খাদ্য চাহিদা অনেক বেশি সে কারণে নার্সারি পুকুরে প্রথম দিকে বেশি মাত্রায় খাবার প্রয়োগ করতে হয় তবে পোনা বড় হওয়ার সাথে সাথে খাদ্য প্রয়োগের হার কমে গেলেও খাদ্যের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়আঁতুড় পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ হারলালন পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ হার : মজুদকৃত পোনার ওজনের ১০-

খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি
রেণু/মজুদের প্রথম দিন পর্যন্ত সরিষার খৈল গুলিয়ে প্রয়োগ করা ভালো তারপর তার সাথে মিহি চালের কুঁড়া/ভুসির মিশ্রণ দেয়া যায় (৫০:৫০) অধিক উৎপাদনের জন্য এর সাথে আমিষসমৃদ্ধ খাদ্য (গবাদিপশুর রক্ত/ফিশমিল) দেয়া যেতে পারে খাদ্যে আমিষের মান ২৫-৩০% হলে ভালো হয় এবং প্রতিদিন পোনাকে ওজনের -১০% খাদ্য দেয়া উচিত রক্ত/ফিশমিল পাওয়া না গেলে শুধু খৈল কুঁড়া (৫০:৫০) ব্যবহার করা যেতে পারে

. মাছ চাষ
যেসব এলাকায় শুকনা মৌসুমে পুকুর-জলাশয়ে - ফুট পানি থাকে সেখানে চৈত্র-জ্যৈষ্ঠতে কই, শিং-মাগুর, পাঙ্গাস কার্পজাতীয় মাছ চাষ করে মাসের মধ্যে বাজারজাত করা যায়
এসব জলাশয়ে কই, শিং-মাগুর, পাঙ্গাস কার্পজাতীয় মাছের চাপের পোনা/বিগত বছরের পোনা ছাড়তে হবে
প্রতি শতকে শিং-মাগুর ৩০০-৫০০টি এবং কই মাছের একক চাষে ৩০০-৫০০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে
পানির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য পাঙ্গাসের একক চাষ না করে ১০% কার্পজাতীয় মাছ মজুদ করা যেতে পারে
প্রতি কেজিতে ১৮-২০টি হয় রকম প্রতি শতকে ১৪০টি পাঙ্গাস পোনা ১০-১৪টি কার্পজাতীয় মাছের পোনা ছাড়লে তা দ্রুত বড় হবে ১২০ দিনে বাজারজাত করা যাবে
তলদেশের মাটি দূষিত হওয়ার কারণে - বছর পর পর তলদেশের মাটির একটা স্তর উঠিয়ে সার হিসেবে ফসলের জমিতে ব্যবহার করা যেতে পারে
মাছের শরীরের ওজনের % থেকে ১০% হারে খাবার প্রয়োগ করতে হবে
পাঙ্গাস কার্পজাতীয় মাছের ওজন ৫০০ গ্রামের ওপর হলে বাজারজাত করা যেতে পারে

. প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ সংরক্ষণ
প্রাকৃতিক জলায়ে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মাছ ডিম ছাড়ে  প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ডিমওয়ালা মাছকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে হবে