দ্রুত বর্ধনশীল ভিয়েতনাম কই

আমাদের দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের (SIS, Small Indigenous Species) মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু একটি মাছের নাম কই(Climbing parse, Anabas testudineus)

সবুজ-সোনালী বর্ণের এই মাছ একসময় আমাদের বিল-ঝিল-হাওড়ের মত উন্মুক্ত জলাশয়ে সহজেই পাওয়া যেত কিন্তু প্রাকৃতিক জলাভূমি ধ্বংসের কারণে দেশীয় জাতের এই সুস্বাদু মাছটি বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে। চাষের পুকুরে দেশীয় কই-এর বৃদ্ধি দ্রুততর না হওয়ায় কয়েক বছর আগে থাইল্যান্ড থেকে কই মাছের নতুন একটি জাত আমাদের দেশের চাষের মাছ হিসেবে আনা হয়।


কিন্তু পোনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইন-ব্রিডিং-এর বিষয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন না করায় থাই কই এর জাতটি সহসাই এর দ্রুত বর্ধনশীলতার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলতে থাকে ফলে উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকে। এছাড়াও তুলনামূলক অনুজ্জ্বল গাত্রবর্ণের কারণে চাষিরাও বাজারে থাই কই-এর ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় ফলে অনেক মাছচাষিই থাই কই চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ময়মনসিংহের স্বর্ণলতা এগ্রো ফিশারিজ লিমিটেড ২০১০ সালে ইনোভিশন কনসালটিং (প্রা:) লি: ও ক্যাটালিস্ট এর সহায়তায় ভিয়েতনাম থেকে কই মাছের দ্রুত বর্ধনশীল জাতের ব্রুডস্টক সংগ্রহ করে। ভিয়েতনাম কই এর এ জাতটির গাত্রবর্ণ দেখতে অনেকটাই দেশী কই-এর মত এবং খুব দ্রুত বর্ধনশীল। এ ধরনের মাছ চাষের জন্য ভাসমান পিলেট-জাতীয় খাদ্যই সবচেয়ে ভালো। তিনি আরো বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে চাষিরা এ কৈ মাছ চাষ করে মাসে প্রতি শতাংশে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ পাবেন।

ভিয়েতনাম কই মাছ চাষের গুরুত্ব
  • এই মাছ দ্রুত বর্ধনশীল। ৪ মাসে ১৫০-২০০ গ্রাম ওজন হয়।
  • বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু এ মাছ চাষের উপযোগী।
  • বর্ণ ও স্বাদ দেশী কই মাছের মত, তাই বাজার মূল্যও বেশী। চাষ ব্যবস্থাপনা সহজ ও লাভের পরিমান অন্য মাছের চেয়ে বেশী।
  • শিং-মাগুরের সাথে মিশ্রচাষে ৪ মাসেই শিং-মাগুর বাজারজাত করা যায়।

ভিয়েতনাম কই মাছের চাষ
পুকুর নির্বাচন
ভিয়েতনাম কই মাছ চাষের জন্য কম কাদাযুক্ত এবং ৪-৬ মাস পানি থাকে এমন ১৫-১০০ শতাংশ আয়তনের পুকুর নির্বাচন করতে হবে। তবে এর চেয়ে ছোট বা বড় পুকুরেও এ মাছ চাষ করা যায়।

পুকুর প্রস্তুতি
  • পুকুর সেচে পানি শুকিয়ে অবাঞ্ছিত মাছ ও অন্যান্য প্রাণী দূর করতে হবে।
  • পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে।
  • পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে এবং পাড়ে গাছ-পালা থাকলে ডাল কেটে দিতে হবে।
  • প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন/ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করা আবশ্যক।
  • চুন/ব্লিচিং প্রয়োগের ৩ দিন পরে পুকুরে পানি দিতে হবে।
  • পুকুরে পানি দেয়ার ২-৩ দিন পর পোনা মজুদ করতে হবে।

পোনা সংগ্রহ
পুকুরে চাষের জন্য ভিয়েতনাম কই মাছের পোনা স্বর্ণলতা এগ্রো ফিশারিজ লিঃ-এর হ্যাচারী থেকে সংগ্রহ করা যাবে। পোনা পলিথিন ব্যাগে অক্সিজেন দিয়ে পরিবহণ করতে হবে।

পোনা মজুদ
০.১৫-০.২০ গ্রাম (৬০০০-৫০০০ টি/কেজি) আকারের সুস্থ-সবল পোনা ৩.৩ পোনা সংগ্রহ
পুকুরে চাষের জন্য ভিয়েতনাম কই মাছের পোনা স্বর্ণলতা এগ্রো ফিশারিজ লিঃ-এর হ্যাচারী থেকে সংগ্রহ করা যাবে। পোনা পলিথিন ব্যাগে অক্সিজেন দিয়ে পরিবহণ করতে হবে।

পোনা মজুদ
০.১৫-০.২০ গ্রাম (৬০০০-৫০০০ টি/কেজি) আকারের সুস্থ-সবল পোনা প্রতি শতাংশে ৬০০-৮০০টি মজুদ করা যায়।

** পোনা মজুদের সময় কিছু পোনা মারা যায় তাই ১৫-২০% পোনা বেশী মজুদ করা ভাল।


মাছ উৎপাদন
আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করলে ৩-৪ মাসে ভিয়েতনাম কই মাছের গড় ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম হবে। জাল টেনে ও পুকুর শুকিয়ে মাছ ধরতে হবে। এ পদ্ধতিতে ৩-৪ মাসে একর প্রতি ৯-১৫ টন উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

ভিয়েতনাম কই মাছের রোগ/স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
উচ্চ মজুদ ঘনত্ব ও বদ্ধ জলজ পরিবেশে উচ্ছিষ্ট খাবার, মাছের বিপাকীয় বর্জ্য, ও অন্যান্য বর্জ্য পচে পানি দূষিত হয়ে কই মাছের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। খামারে একবার জীবাণু প্রবেশ করলে তাকে নির্মূল করা খুব কঠিন। তাই খামারে জীবাণু প্রবেশের পূর্বেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। নিম্নলিখিত সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব –
  • ইনব্রিড/ক্রসব্রিডমুক্ত সুস্থা ও সবল পোনা সংগ্রহ করা।
  • খামার ও মাছ চাষের সকল সরঞ্জাম জীবাণু মুক্ত রাখা।
  • এক খামারের মাছ ধরার জাল অন্য খামারে ব্যবহার না করা।
  • খামারের পানি নিয়মিত পরীক্ষা করা।
  • উচ্চ মজুদ হার পরিহার করা।
  • পরিমিত ও সুষম খাবার প্রয়োগ।
  • খামার ও মাছের পরিচর্যা নিশ্চিতকরণ।

পরিবহণের সময় পোনা আঘাত পেলে তরোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া পালন পুকুরেও কই মাছের তরোগ হতে পারে। এরোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ক্ষতরোগ প্রতিরোধে শীতের শুরু হতে ১৫ দিন পর পর প্রতি শতাংশে ২৫০ গ্রাম লবন ও ১৫০ জিওলাইট প্রয়োগ করতে হবে।ক্ষরোগের প্রাদুর্ভাব হলে পুকুরে জীবানুনাশক ব্যবহার করতে হবে। এন্টিবায়োটিক হিসাবে প্রতি কেজি খাবারে ৫ গ্রাম অক্সিটেট্রাসাইকিন ও ২ গ্রাম ভিটামিন-সি মিশিয়ে ১০ দিন প্রয়োগ করতে হবে ।

এই মাছের চাষ পদ্ধতি থাই কই এর চাষ পদ্ধতির মতই। তবে ভাল ফলন পেতে হলে শতাংশ প্রতি ৫০০-৬০০টি পোনা ছেড়ে বাজারে প্রচলিত ভাল মানের থাই কই এর খাবার সরবরাহ করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। স্বর্ণলতা এগ্রো ফিশারিজ লিমিটেড -এ ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে ভিয়েতনাম কই এর পোনা পাওয়া যাবে। পোনার সাথে বিনামূল্যে এই মাছের চাষ পদ্ধতির উপর রচিত ম্যানুয়াল সরবরাহ করা হবে। পোনা প্রাপ্তির জন্য ০১৭১১ ১৬৮ ২০৫ নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়াও হ্যাচারির নিজস্ব ওয়েবসাইটের এই পাতা থেকে পোনার অর্ডারও দেয়া যাবে।

আরও জানতে-
দেখতে পারেন সম্প্রতি ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে বাংলাদেশে ভিয়েতনাম কই চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে লেখকের একটি সাক্ষাতকার যা পাওয়া যাবে এই ওয়েব সংযুক্তিতে।
ভ্রমণ করতে পারেন স্বর্ণলতা এগ্রো ফিশারিজ লিমিটেড এর ওয়েবসাইটে যার ঠিকানা:www.sharnalata.com
যোগাযোগ করতে পারেন মোবাইলে, যার নম্বর: ০১৭১১ ১৬৮ ২০৫
পাঠাতে পারেন ই-মেইল, যার ঠিকানা: safagrofisheries@gmail.com
সরাসরি যেতে চাইলে যেতে হবে এই ঠিকানায়: স্বর্ণলতা এগ্রো ফিশারিজ লিমিটেড, রাধাকানাই, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ।