২ লাখ টাকা পুঁজিতে কোটিপতি

কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের ফলে মাছ চাষ করে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের বড় চারিগাঁও গ্রামের মোহাম্মদ ইয়াহিয়া হারুন আজ নিজের ভাগ্য নিজেই বদল করেছেন। মাত্র দুই লাখ টাকা পুঁজি থেকে মোহাম্মদ ইয়াহিয়া হারুন আজ কোটিপতি সফল হ্যাচারি মালিক। তিনটি দেশের নামের প্রথম অক্ষর থেকে তার মৎস্য হ্যাচারির নামকরণ করেছেন ‘তাই-থাই-বাংলা সাইন্টিফিক হ্যাচারি’। 
এখন তিনি এলাকার বেকার যুবকসহ সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে মডেল হিসাবে দাঁড়িয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন বর্তমান চাকরির দু¯প্রাপ্য বাজারে মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব।

স¤প্রতি হ্যাচারি এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনের সময় কথা হয় এ সফল মৎস্য খামারীর সঙ্গে। ইয়াহিয়া হারুন এম.কম.পাশ করে ঢাকার মাতিঝিলে প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে আর ওই ব্যবসা এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যš- দেশে ফিরে গ্রামের বাড়িতে মাছ চাষে শুরু করেন। ২০০৫ সালে প্রথমে মাত্র দুই লাখ টাকা দিয়ে মাছ চাষ (মনোসেক্র হাইব্রিড সুপ্রিম তেলাপিয়ার) রেনু পোনার হ্যাচারি ব্যবসা শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কুতুবেরহাট শাখা থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে থাইল্যান্ডের মনোসেক্র তেলাপিয়ার রেনু পোনা উৎপাদন শুরু করার পর প্রথম বছর সফলতা না পেলেও পরের বছর থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। এর পরবর্তীতে ২০০৬ সালে এ হ্যাচারি থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে তিনি ক্রমান্বয়ে হ্যাচারি স¤প্রসারিত করেন। বর্তমানে তার নিজের ১০ একর ও লিজ নেওয়া আড়াই একর জমির ওপর এ হ্যাচারি গড়ে উঠেছে। এতে ইয়াহিয়ার বর্তমানে পুঁজি এক কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি জানান- উপজেলা মৎস্য বিভাগে তিনি একমাত্র মৎস্য চাষী হ্যাচারিয়ান হিসাবে নিবন্ধন করেছেন। তিনি আরও জানান, প্রতিদিন গড়ে তার মৎস্য হ্যাচারির জন্যে তিন’শ কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এতে তার ব্যয় হয় ১১ হাজার এক’শ টাকার মত। এ ছাড়া প্রতিদিন তার হ্যাচারিতে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। মাছ চাষে নিজের অভিজ্ঞার কথা তুলে ধরে নানা সমস্যার কথা বললেন, ভয়াবহ বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে রেনুপোনা উৎপাদনে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তিনি জেনারেটর সাহায্য নিয়ে পোনা উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। এই কারণে তাকে প্রতি মাসে বিপুল অংকের ডিজেলের টাকা গুনতে হচ্ছে। তিনি মৎস্য খাতকে এগিয়ে নিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা দরকার বলে জানান।

তিনি আরও বলেন- মাছের খাদ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে মাছ ও রেনুর দাম বাড়েনি। ফলে মাছ চাষীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি মাছ চাষের প্রধান উপাদান খাদ্যের মান সঠিক না থাকায় হ্যাচারি মালিকেরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে মাছ চাষ করছেন। তাই তিনি সরকারের সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকে খাদ্যের মাননিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী জানান। এছাড়া পোনা পরিবহনের জন্য প¬াস্টিক পলিথিনের ব্যবহারের ওপর থেকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সহজীকরণের দাবী জানান।

মোহাম্মদ ইয়াহিয়া হারুন হ্যাচারির পাড়ে তিন’শ পেঁপে গাছ লাগিয়েছেন। প্রতিটি পেঁপে গাছ থেকে গড়ে তিন’শ টাকা হারে ৯০ হাজার টাকার মত আয় করেছেন। তিনি আরও জানান, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতিতে তার হ্যাচারিতে সর্বোউত্তম আবিস্কার হাইব্রিড সুপ্রীম তেলাপিয়া, নাইলোটিকা ও গির্ফট তেলাপিয়ার মধ্যে সংমিশ্রন (ক্রস) করে হাইব্রিড তেলাপিয়া উৎপাদন করা হয়। তাই এ তেলাপিয়া পরবর্তীতে নতুন করে বাচ্চা দেয় না। খাদ্যের প্রয়েজনীয়তা অন্য তেলাপিয়ার চেয়ে ৪০ শতাংশ কম প্রয়োজন হয়। এ জন্য তেলাপিয়া মাছ চাষ সহজ লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে তার হ্যাচারি থেকে বৃহত্তর নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৎস্য চাষীরা লাখ লাখ তেলাপিয়ার রেনুপোনা নিয়ে চাষ করছেন।