গিফট তেলাপিয়ার সুপারমেল

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেলাপিয়া চাষের সর্বশেষ লাভজনক প্রযুক্তি গিফট তেলাপিয়ার সুপার মেল। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।

ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো: রফিকুল ইসলাম সরদার এবং মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য মো: মোখলেছুর রহমান দীর্ঘ আড়াই বছর যৌথ গবেষণা শেষে এ সুপারমেল (পুরুষ) উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। উদ্ভাবিত সুপারমেল কোনো হরমোন প্রয়োগ ছাড়াই কৌলিতাত্ত্বিকভাবে শতভাগ মেল বাচ্চা উৎপাদন করতে পারবে। বাণিজ্যিকভাবে শতভাগ মেল বাচ্চা উৎপাদন বেশ লাভজনক।

শতভাগ মেল (পুরুষ) বাচ্চা উৎপাদনে বর্তমান যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে তা বেশ জটিল ও ব্যয় সাপেক্ষ। এ পদ্ধতিতে পুরুষ ও স্ত্রী গিফট তেলাপিয়া ১:৪ থেকে ১৮ অনুপাতে জালের তৈরি হাপার মধ্যে পুকুরে রাখা হয়। ১৫ দিন পর পর স্ত্রী মাছের মুখ থেকে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে তা হ্যাচারিতে ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়।

উৎপন্ন বাচ্চাকে সাধারণত প্রতি কেজি খাদ্যে ৬০ মিলিগ্রাম হারে মিথাইল টেস্টোস্টেরন হরমোন মিশিয়ে ২১ থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত খাওয়ানো হয়। এর ফলে অধিকাংশ পোনা পুরুষে পরিণত হয়। দেশের ৮ থেকে ১০টি হ্যাচারি এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বছরে ১৫ থেকে ২০ কোটি তেলাপিয়ার পোনা উৎপাদন করছে। এ পদ্ধতিতে মেল উৎপাদনের হার প্রায় ৯০ ভাগ এবং বেশ জটিল। ড. রফিকুল ইসলাম সরদার এবং মোখলেছুর রহমান উদ্ভাবিত সুপারমেল এ জটিলতা দূর করবে এবং শতভাগ মেল বাচ্চা উৎপাদন নিশ্চিত করবে।

ড. রফিকুল ইসলাম সরদার জানান, আফিন্সকায় জন্মগত তেলাপিয়া ১৯৫৪ সাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশে আনা হয় এবং চাষাবাদের চেষ্টা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালে তেলাপিয়ার উন্নত প্রজাতি আফিন্সকা থেকে দেশে আনা হয়। এ তেলাপিয়াই গিফট তেলাপিয়া হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

এটি বর্তমানে দেশে থাই পাঙ্গাস মাছের পরই সর্বাধিক চাষকৃত মাছ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ড. সরদার বলেন, পুরুষ ও স্ত্রী তেলাপিয়া একসাথে চাষ করলে বংশ বিস্তার খুব দ্রুত হয়। এতে মাছের সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে এবং ব্যবস্খাপনা কঠিন হয়ে যায়। শতভাগ মেল বাচ্চা উৎপাদনে এ সমস্যা আর থাকে না। আগ্রহী তেলাপিয়া চষিরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যের জন্য ০১৭১২-০১৫৯০৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।