শীতকালে মাছের খাদ্য প্রয়োগ প্রসঙ্গে



মো. মোজাম্মেল কবির

মাছের খাদ্য উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঋতুভেদে মাছের চাহিদানুযায়ী খাদ্য উত্পাদন করে না। অথচ শীত ও গ্রীষ্মকালে মাছের খাদ্য চাহিদা এক থাকে না। আর এর উপর মাছের উত্পাদন খরচ ও লাভ-লোকসান অনেকাংশেই নির্ভর করে।

শীতকালে মাছ চাষের জন্য পরিবেশ প্রতিকূলে থাকে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে মাছের খাদ্য গ্রহণ প্রবণতা কমে যায়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই চার মাস তাপমাত্রা কম থাকার ফলে মাছ উত্পাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের রোগ-বালাই দেখা দেয়। শীতকালীন মাছের রোগের জন্যও বাংলাদেশে বর্তমান প্রচলিত খাদ্য ব্যবস্থাও অনেকটা দায়ী। এমন একটি অবস্থায় শীতকালে মাছের গ্রেয়ার খাদ্যে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ ভাগ আমিষ ও ৭ ভাগ চর্বি রেখে খাদ্য তৈরি করা উচিত যা বর্তমান মত্স্য খাদ্য উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মেনে চলে না। মাছের খাদ্যে আমিষের পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চর্বি থাকা দরকার। শীতকালে মাছের ওজন কমে যাওয়ার পেছনে যে কারণটি কাজ করে তা হচ্ছে খাদ্য গ্রহণ না করা বা কম খাদ্য গ্রহণ করার ফলে মাছের দেহে জমে থাকা চর্বি ক্ষয় হওয়া। মাছের খাদ্যে চর্বির পরিমাণ ৬ থেকে ৭ ভাগ থাকা উচিত। শীতকালে ব্যাকটিরিয়াজনিত বিভিন্ন প্রকার রোগের আক্রমণ হয়। এ অবস্থা মোকাবিলায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খাদ্যে নিয়মিত প্রয়োজন অনুপাতে ভিটামিন ও খনিজ ব্যবহার করলে মাছ রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয়।

মাছের খাদ্যে অন্যান্য সব উপাদান ঠিক রেখে শুধু মানসম্পন্ন ভিটামিন প্রিমিক্স ব্যবহারের ফলে ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেশি উত্পাদন পাওয়া যায়। আবার এর সাথে খনিজ সহযোগে খাদ্য তৈরিতে উত্পাদন পাওয়া যায় ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেশি। এ ছাড়া খাদ্যে ভিটামিন ও খনিজ ব্যবহারে যে সুফলটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। শীতকালে ব্যাকটিরিয়াজনিত বিভিন্ন প্রকার রোগের আক্রমণ হয়। এ অবস্থা মোকাবিলা করা যায় খাদ্যে নিয়মিত প্রয়োজন অনুপাতে ভিটামিন ও খনিজ ব্যবহার করলে।

খাদ্যে আমিষের মাত্রা বাড়লে খাদ্যের দাম বাড়ে। সে ক্ষেত্রে শীতকালে মাছের আমিষের চাহিদা কম থাকা সত্ত্বেও অধিক আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রয়োগে অপচয়সহ মাছের উত্পাদন খরচ বেড়ে যায়। অপচয়ের ধরণ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দু'ভাবেই হতে পারে। প্রথমত মাছ যে খাদ্য গ্রহণ করছে কিন্তু উত্পাদন প্রক্রিয়ায় আমিষের কার্যকারিতা থাকছে না বা হজম হচ্ছে না ফলে মলের সাথে বের হয়ে যাচ্ছে। আবার মাছ যদি খাদ্য গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে অপচয় হচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই অপচয়কৃত আমিষ পচনের ফলে পানি দ্রুত নষ্ট হয় এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যাকটিরিয়া জন্মে। শীতকালে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার ফলে উক্ত ব্যাকটিরিয়া নানা ধরনের রোগে মাছকে সহজেই আক্রান্ত করে।

দিন দিন মাছের উত্পাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মাছ চাষে সিংহ ভাগ খরচ হয় মাছের খাদ্য কেনা বাবদ। তাই এ ব্যাপারে চাষিদের সতর্ক নজর দেয়া দরকার। মাছের খাদ্যে প্রতারিত হলে বা অপচয় হলে সাধারণ চাষি যারা নিয়মিত ওজন পরীক্ষা করেন না বা নিয়মিত খাদ্য রূপান্তর হার পরীক্ষা করেন না তারা মাছ বিক্রয়ের পূর্বে ক্ষতির পরিমাণ বুঝতে পারবেন না। বর্তমানে যেখানে মাছ চাষ একটি সীমিত লাভের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে সেখানে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। 

লেখক:মাছ চাষি, ময়মনসিংহ