মুক্তা চাষ ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

মুক্তা সৌখিনতা ও আভিজাত্যের প্রতীক। মুক্তা অলংকারে শোভিত অতি মূল্যবান রতœ। মুক্তার প্রধান ব্যবহার অলংকার হলেও কিছু কিছু জটিল রোগের চিকিৎসায় এবং ঔষধ তৈরিতে মুক্তা ও মুক্তাচূর্ণ ব্যবহার করা হয়। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, মুক্তা ধারণে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। এছাড়া মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের খোলস নানা ধরণের অলংকার ও সৌখিন দ্রব্যাদি তৈরি এবং ক্যালসিয়ামের একটি প্রধান উৎস-যা হাঁস-মুরগী, মাছ ও চিংড়ির খাদ্যের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের মাংস মাছ ও চিংড়ির উপাদেয় খাদ্য হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। অনেক দেশে ঝিনুকের মাংস মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহ্নত হয়। অর্থাৎ একজন চাষী মুক্তাচাষ করে মুক্তার পাশাপাশি ঝিনুকের খোলস ও মাংসল অংশ বিক্রি করেও লাভবান হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্তার চাহিদা যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারেও মুক্তার চাহিদা উল্লেখযোগ্য।
আমাদের দেশে পূর্বে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণ মুক্তা উৎপাদিত হতো। এসব বিষয় বিবেচনা করে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) স্বাদুপানিতে মুক্তাচাষের পরীক্ষামূলকভাবে গবেষণা পরিচালনা শুরু করে। গবেষণার মাধ্যমে প্রণোদিত উপায়ে সফলভাবে মুক্তা চাষ ও মুক্তা উৎপাদন করা হয়।
সব ধরনের ঝিনুক দ্বারা মুক্তা চাষ সম্ভব নয়। তাই মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক চিহ্নিতকরণের উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী জরীপ কাজ পরিচালনা করা হয়। ওই জরীপে দেশে ৪ ধরণের মিঠাপানির মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক পাওয়া যায়। মুক্তা উৎপাদনকারী অপারেশনকৃত ঝিনুকের বেঁচে থাকার হার ৮৬% এবং মুক্তা তৈরির হার ৯০%। 

দেশীয় ঝিনুক থেকে সর্ব্বোচ ১২টি মুক্তা তৈরি হয়। বিএফআরআই এর সাফল্যে পাঁচ মাসে সর্ব্বোচ্চ ৫ মি.মি. এবং গড়ে ৩ মি.মি. আকারে মুক্তা তৈরি হয়। ইতোপূর্বে এই আকারের মুক্তা তৈরিতে সময় লেগেছিল ১২-১৮ মাস।
মুক্তাচাষ ব্যয়বহুল বা কঠিন কোন বিষয় নয়। ঝিনুকে মুক্তা উৎপাদনের প্রযুক্তি এখন আমাদের জানা আছে। আমাদের দেশের জলবায়ু মুক্তাচাষ উপযোগী। কারণ বাংলাদেশের শীতকাল দীর্ঘ নয় এবং সারা বছরেই উষ্ণ আবহাওয়া বিদ্যমান যা ঝিনুকের বৃদ্ধি ও মুক্তাচাষের অনুকূল। আমাদের দেশে রয়েছে বিপুল পরিমাণ জলরাশি যেখানে স্বাদুপানির মাছের সাথে সাথে সহজেই মুক্তাচাষ করা সম্ভব। বন্যাপ্লাবিত এলাকা, হাওড়-বাওড়ে সহজেই মুক্তাচাষ করা যায়। আমাদের প্রাকৃতিক উৎস মুক্তাচাষ উপযোগী। বাংলাদেশে ৪টি প্রজাতির মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুক পাওয়া যায়। এসব ঝিনুক প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে ছোট আবদ্ধ জলাশয়ে রাখলেও এদের বৃদ্ধি হ্রাস পায় না। দীর্ঘদিন ধরে হাঁস-মুরগী, মাছ ও চিংড়ির খাবার হিসাবে ঝিনুক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত আহরণে প্রাকৃতিক উৎসে ঝিনুকের পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে এই প্রাণীটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই দেশব্যাপী আমাদের মাছের যে ৩০০টি অভয়াশ্রম রয়েছে সেখানে মাছের সাথে ঝিনুক মজুদ করা হলে পরবর্তীতে প্রাকৃতিক প্রজননে এসব ঝিনুকের সংখ্যা বেড়ে যাবে যা এই প্রাণীটির বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।

মাছের সাথে মুক্তাচাষ লাভজনক। এক্ষেত্রে মুক্তা মাছের সাথে বাড়তি ফসল হিসাবে পাওযা যায়। ঝিনুক চাষে সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। জলাশয়ে কেবল নিয়মিত চুন ও সার ব্যবহার করলেই চলে। গবেষণায় দেখা গেছে কম বয়সী গ্রামীণ তরুণীরা ৫-৭ দিনের প্রশিক্ষণে ঝিনুক অপারেশনে দক্ষ হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে দেশের পল্লী এলাকায় প্রচুর সংখ্যক বেকার তরুণীদের মুক্তাচাষে প্রশিক্ষিত করা গেলে তারা কৃত্রিম মুক্তাচাষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পুকুর অথবা দিঘী থাকে। তাই মুক্তাচাষে নারীদের নিয়োজিত করা গেলে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশে স্বাদুপানির মুক্তাচাষের সম্ভাবনা বিপুল।
বাংলাদেশে প্রচুর পুকুর-দীঘি, খাল-বিল, হাওড়-বাওড় নদী-নালা আছে যা মুক্তাচাষ উপযোগী। একই জলাশয়ে মুক্তাচাষ মাছের ক্ষতি করে না বিধায় পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফসল হিসাবে মূল্যবান মুক্তাচাষ করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। তাছাড়া মুক্তা উৎপাদনের জন্য চাষকৃত ঝিনুক ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলাশয়ের পরিবেশ উন্নত করে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অবস্থিত বিএফআরআই এর সায়েন্টিফিক অফিসার বলেন, উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে দেশে মুক্তাচাষে বিরাট সফলতা অর্জন করা সম্ভব-যা দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। এক্ষেত্রে একদিকে যেমন দেশে কর্ম সংস্থান বৃদ্ধি পাবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

5 comments:

Unknown said... Udyokta

আমি মুক্তা চাষ করতে চাই। মুক্তা চাষ কিভাবে করব তা জানালে অনেক উপকার হতো। সহযগিতার আশায় রহিলাম।

Badal said... Udyokta

মুক্তা চাষের উপর আমার এখানে কিছু পোস্ট আছে, আপনি দেখতে পারেন।

shishir talukdar said... Udyokta

বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তা চাষের জন্য আমাদের নিজস্ব খামার প্রস্তুত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে কয়েক মাস আগে। বর্তমানে পুকুর গুলোতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। আমাদের দেশীয় ঝিনুক আকারে ছোট হউয়ায় মুক্তার আকার ও খুব ছোট হয় যার আন্তর্জাতিক চাহিদা তেমন নেই। আমরা মুক্তা উৎপাদন শুরু করতে পারছি না দেশীয় এসব মুক্তার পাইকারি ক্রেতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে। বিএফআরআই ও বিক্রয় সম্পর্কে সঠিক ও পরিস্কার ধারণা ও তথ্য দিতে পারেনি। গড়ে ৩ মিমি সাইজের এসব মুক্তার পাইকারি ক্রেতা থাকলে সঠিক তথ্য দিতে ও যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হল। ধন্যবাদ।.
ইমেইলঃ nbpearls.bd@gmail.com
ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/NorthBengalPearls

Unknown said... Udyokta

আপনার এখানে বলতে কোথায়? ভাইয়া আমি এই ব্যাপারে আগ্রহী

Badal said... Udyokta

http://www.udyokta.com/p/blog-page_3871.html