মাছ চাষে পটিয়া এখন মডেল

রাত নামলেই জমে ওঠে পটিয়ার পোনা মাছের বাজার (স্থানীয় ভাষায় বাইশের বাজার)। 
প্রতিরাতে এ বাজারে বিক্রি হয় অর্ধ কোটি টাকার পোনা। স্থানীয় ভাষায় মাছের পোনাকে বলা হয় ‘বাইশ’। 
আর এ বাইশ বিক্রি করে গত ২০ বছরে পটিয়ার অনেকেই বনে গেছেন লাখপতি থেকে কোটিপতি। পটিয়া রেল স্টেশন ও এর আশপাশে প্রতি রাতে বসে পোনার বাজার। রাত যত গভীর হয় ততই বাজার জমে ওঠে। বিশেষ করে রাত ১২টার পর ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁক-ডাক ও পোনা পরিবহনের গাড়িগুলোর ভেঁপুর আওয়াজে চারদিক জমজমাট হয়ে ওঠে। কখন থেকে পটিয়ার এই পোনার বাজার চালু হয়েছে তা অনেকেই জানেন না। তবে পুরনো পোনা বিক্রেতা জালাল উদ্দিন জানালেন তিনি ছোটকাল থেকেই এ বাজার দেখে আসছেন। তার হিসেব মতে পাকিস্তান আমল থেকেই বসছে এখানে পোনার বাজার। এ বাজারকে কেন্দ্র করে পটিয়া এখন মাছের পোনা উত্পাদন, বাজারজাতকরণ ও মাছ চাষের মডেল হয়ে উঠেছে। সারাদেশ থেকে ক্রেতারা এ বাজারে ভিড় করেন। আসেন উত্তরবঙ্গের যশোর, সাতক্ষীরা, বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহীর ক্রেতারা। উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, রতনপুর, চক্রশালা, অলিরহাট, কাগজীপাড়া, দক্ষিণ ভূর্ষি ও পটিয়া সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাত ১০টা হলেই অ্যালুমেনিয়ামের ডেকচি ভর্তি করে ভারে ভারে পোনা মাছ জড়ো হয় রেল স্টেশনে। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে ট্রেন চলাচল নাই বললেই চলে। এ অবস্থায় যাত্রী আগমন-নির্গমন নেই বলে মাছ বিক্রেতা ও ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে এ বাজারে জড়ো হয়ে পোনা ক্রয়-বিক্রয়ে মেতে ওঠেন। পার্শ্ববর্তী উপজেলা ছাড়াও এই পোনা ট্রাকে করে চলে যায় নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।
কার্প জাতীয় মাছের এ পোনার জন্য পটিয়ার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লেও হাল আমলে এখানে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৩৬টি মত্স্যখামার ও ১৪০টি মত্স্য নার্সারি। সরকারি উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়কালে এখানে ১টি মত্স্যখামার প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে বৃহত্ আকারের বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ১০টি পোনা উত্পাদনকারী মত্স্যখামার।
এসব মত্স্যখামারে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানালেন হক মত্স্য হ্যাচারির পরিচালক ফজলুল হক। এসব খামারে থাইল্যান্ডের হাইব্রিড তেলাপিয়া পোনা ছাড়াও রুই, কাতলা, কার্প, বিগ্রেড, সরপুঁটি, গ্রাসকার্প ও নাইলোটেকিয়া অন্যতম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি ভার কার্প ১৮শ’, কাতলা ২ হাজার, রুই ১৪ শ’, তেলাপিয়া ১২শ’, বিগ্রেড ৬শ’, মৃগেল ৮ শত, সরপুঁটি ১২শ’, গ্রাসকার্প ১৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পোনা বিক্রেতা এজাহারুল হক, সাধু মহাজন, কেলিশহরের কুলু, পৌর সদরের নুরুল আবছার, হাবিবুর রহমান, ধনাগাজী, পেঠান আলী ও নুরুল হক এখন কোটিপতি।
এ প্রতিবেদককে তারা জানালেন, শুরুতে যেখানে তারা কাঁধে করে পোনার ভার বহন করেছেন আর সেখানে আজ তারা গাড়ি-বাড়ির মালিক। ছেলে-মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠলেও তারা লাভজনক এ পেশা ছাড়েননি। সূত্র জানিয়েছে, পটিয়ায় পুকুরের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে ৮ হাজার পুকুরে মাছ চাষ হয়। তাছাড়া প্রায় ৩০ কিলোমিটার খাল রয়েছে যেখানে সারাবছরই মাছ চাষ ও মাছ ধরায় নিয়োজিত আছে ১৬শ’ জেলে। উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা আবু তৈয়ব জানালেন, পটিয়ায় ৩০টি জলমহাল ও ৩০টি খাস পুকুর রয়েছে। তবে এসব পুকুরের সবক’টিই এখন দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। জেলেরা অভিযোগ করেছে তারা চাঁনখালী ও শ্রীমতি খালে মাছ ধরতে গেলে প্রভাবশালীরা তাদের মাছ ধরতে প্রায়ই বাধার সৃষ্টি করে।