মাছ চাষে বায়োটেকনোলজি

আমাদের দেশীয় রুই মাছ প্রথম বছরে খুব একটা বড় হয় না। যার কারণে খামারিরা এক বছর বয়সী রুই মাছের পোনা দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু এই রুই মাছকে যদি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ট্রিপ¬য়েড করা হয় তাহলে কমপক্ষে এর বৃদ্ধি হবে প্রায় দেড়গুণ। রুই মাছের ট্রিপ¬য়েড পোনা করাও খুবই সহজ।
প্রথমে স্ত্রী মাছের পেট থেকে চাপ প্রয়োগ পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সময় পর্যš- র্স্পাম মেশানোরপর নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যš- ডিমগুলোকে রেখে দিলেই ট্রিপ¬য়েড রেনু পাওয়া যাবে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে ঊলে¬খিত পদ্ধতিতে সব পোনাই ট্রিপ¬য়েড হয় না। আর সে জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পার হলে কোনটা ট্রিপ¬য়েড আর কোনটা ডিপ¬য়েড পোনা তা সহজেই সনাক্ত করা যায়। আর সনাক্তের কাজ শেষ করতে পারলে প্রথম বছরের ট্রিপ¬য়েড পোনা দিয়েই এক বছরে কমপক্ষে ১ কেজি ওজনের রুই উৎপাদন করা সম্ভব।
জন্মগতভাবে উন্নত দেশি শিং, কৈ, পাবদা, পুটি, পাঙ্গাস ইত্যাদি সাধারণভাবে উৎপাদিত মাছের মধ্যে অর্ধেক মাছ পুরুষ আর অর্ধেক মাছ স্ত্রী। এসব মাছের মধ্যে কিছু পুরুষ ও স্ত্রী মাছ বড় হয়। যে সম¯- স্ত্রী মাছ বড় হয় তার মধ্যে শিং, কৈ, পাবদা, পুটি, পাঙ্গাস মাছ রয়েছে। আবার কিছু পুরুষ মাছ বড় হয় যেমন: তেলাপিয়া, দেশি মাগুর ইত্যাদি। যে মাছগুলো এক বছরে বা তারও কম সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে সে সম¯- মাছকে সহজেই বায়োটেকনোলজি প্রয়োগ করে স্ত্রী মাছে রূপাš-রিত করা সম্ভব। তিন বছরের মধ্যেই জন্মগতভাবে উন্নত স্ত্রী কৈ মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে শিং, পাবদা, পুটি, পাঙ্গাস মাছের স্ত্রী মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
স্ত্রী মাছ উৎপাদন করার কৌশল সাধারণভাবে কৈ, শিং, পাবদা, পুটি, পাঙ্গাসকে প্রজনন করিয়ে রেনু উৎপাদন করার পর খাদ্য গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ১৭ আলফা মিথাইল টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রয়োগ করে মাছগুলোকে পুরুষ মাছে রূপাš-রিত করতে হবে।
এই মাছগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর থেকে একটি করে পুরুষ মাছ প্রজননে ব্যবহার করতে হবে এবং অই পুরুষ মাছটিকে আলাদা করে রাখতে হবে। পরবর্তীতে বাচ্চা বড় হওয়ার পর বাচ্চাগুলোকে সেক্সিং টেস্ট করে যদি সব স্ত্রী মাছ পাওয়া যায় তাহলে এই মাছের প্রজননে ব্যবহৃত পুরুষ মাছটিই হল সুপার পুরুষ এবং এই পুরুষ মাছের সাথে যেকোন স্ত্রী মাছের প্রজনন করালেই জন্মগতভাবে উন্নত সব স্ত্রী মাছ পাওয়া যাবে। এভাবে বারবার পরীক্ষা করে সুপার পুরুষ মাছ সংগ্রহ করতে হবে।
এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে থাই কৈ মাছের সব স্ত্রী মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করে শিং, পুটি সব স্ত্রী মাছের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি এই গবেষণাটি শেষ হলে এর যাবতীয় তথ্যাদি সাধারণ খামারির মাঝে উন্মুক্ত করার ইচ্ছা আছে। জন্মগতভাবে উন্নত এই মাছ সাধারণ মাছের চেয়ে কমপক্ষে ৭০% অতিরিক্ত উৎপাদন হয় (থাই কৈ)।
এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণভাবে উৎপাদিত স্ত্রী মাছের চেয়ে এ মাছের শতকরা ২০ ভাগ ওজনে বেশি হয়ে থাকে। একই প্রক্রিয়ায় পাঙ্গাস মাছের স্ত্রী মাছ উৎপাদন করতে পারলে দেশে পাঙ্গাস মাছের উৎপাদনে বিশাল আকারে বেড়ে যাবে। যদিও প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ৪/৫ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে দেশের প্রোটিন চাহিদা পূরণে সামনের দিনে বায়োটেক ফিসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।